আফগানিস্তানে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভেঙে দেয়া হয়েছে

আফগানিস্তানে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভেঙে দেয়া হয়েছে

আফগানিস্তানে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভেঙে দেয়া হয়েছে

আফগানিস্তানের নতুন শাসক তালেবান দেশটির নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়টি দৃশ্যত বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা এমন একটি বিভাগ চালু করেছে, যার প্রধান কাজ কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগ করা। শুক্রবার নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড নামিয়ে সেখানে নৈতিকতা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মচারীরা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে তালেবান সদস্যদের অনুরোধ করছে তাদের কাজে যোগদানের সুযোগ দিতে।

১৯৯০-এর দশকে আফগানিস্তানে তালেবানের গঠিত নৈতিকতা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় কঠোরভাবে ইসলামী আইন প্রয়োগ করেছিল। তখন নারীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।

গত ২০ বছরে আফগান নারীরা তাদের বেশ কিছু মৌলিক অধিকার নিয়ে লড়াই করেছিল। তা অর্জনও করেছিল। কিন্তু এখন তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা, যাতে একজনও নারী নেই। সেটি নারীদের সেই অর্জনকে উল্টে দেবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কাবুল থেকে বিবিসির আন্তর্জাতিকবিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা লিস ডুসেট জানান, তালেবান নেতারা এর আগে বলেছিলেন যে আফগানিস্তান বদলে গেছে। সেই বাস্তবতা তারা স্বীকার করেন। নিজেরাও তেমনিভাবে বদলে গেছেন। কিন্তু তাদের সেই কথা আর এখনকার কাজের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অতীতে নৈতিকতা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বলেছিল, এটিকে ভিন্নমত দমনের কাজে ব্যবহার করা হয়। জনগণ, বিশেষভাবে নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ বলপূর্বক প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তালেবান বলছে, নৈতিকতাসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়টি গঠন করা খুবই প্রয়োজন।

‘এর প্রধান কাজ হলো ইসলামের সেবা,’ তালেবান সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ নিউইয়র্ক পোস্টকে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘এজন্যই সদগুণ ও নৈতিকতার মন্ত্রণালয় স্থাপন জরুরি।

নৈতিকতা মন্ত্রণালয়ের কাজ কী?
কাবুলে এর অফিসের সামনে যে নতুন সাইনবোর্ড তোলা হয়েছে, সেখানে এই মন্ত্রণালয়ের পুরো নাম হচ্ছে- সদগুণের প্রসার ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়।

তালেবান যখন প্রথম আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তখন এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে এর কর্মপরিধি বাড়ানো হয়। এর মূল কাজ ছিল রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে তালেবান শরীয়া আইনের যে ব্যাখ্যা দেয় তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। ওই সময় যেসব নারী ‘শালীনভাবে’ পোশাক পরতো না, কিংবা পুরুষ সঙ্গী ছাড়া রাস্তায় বের হলে তাদের ধরে পিটুনি দেয়া হতো। মেয়ে শিশুদের তারা প্রাইমারি স্কুলের বেশি পড়াশুনোর অনুমতি দিতো না।

ওই সময় আফগানিস্তানের গান-বাজনা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি ঘুড়ি উড়ানোর মতো নির্দোষ আনন্দও তারা উপভোগ করতে দিতো না। কঠোরভাবে নামাজের ওয়াক্ত পালন করা হতো। পুরুষদের দাড়ি রাখতে হতো ও পশ্চিমা ধরনের চুল কাটা গ্রহণযোগ্য হতো না। কেউ এসব আইন ভঙ করলে দোররা মারা, মারধর, হাত কেটে দেয়া ও প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হতো।

কাবুলে তালেবানের দু'জন সদস্য ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, তালেবান অতীতের মতো এসব আইন প্রয়োগ করবে না। সেনা সদস্য বা পুলিশের জায়গায় এখন এসব আইন প্রয়োগ করবে তালেবান সদস্যরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান অভিযানের পর এসব তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই আফগানিস্তানের রক্ষণশীল গোষ্ঠীর চাপে ২০০৬ সালে একই ধরনের একটি সংস্থা চালু করেছিলেন। তবে এটির আচরণ ছিল অনেকখানি সংযত। এখন তালেবান কী করবে তা দেখার অপেক্ষা।

সূত্র : বিবিসি