ইসি গঠন নিয়ে ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

ইসি গঠন নিয়ে ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

ইসি গঠন নিয়ে ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের বিধানাবলীর সাপেক্ষে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে’ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে। যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা।

দেশের গণমাধ্যমে শনিবার লিখিতভাবে পাঠানো এই বিবৃতি প্রদান করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ। বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’

তারা বলেন, গত দু’টি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দু’টি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এডহক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দু’টি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিবউদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাদের পক্ষপাত দুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেস। যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক অনাস্থা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। তাই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে। যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। যাতে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবেও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একইসাথে অনুরোধ জানাচ্ছি, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারে এ ব্যাপারে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকেই ভাবতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, সাবেক পরাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, সিপিডির ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড. আই খান পান্না, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ফেমার সাবেক সভাপতি মুনিরা খান, নারীপক্ষের শিরিন হক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভানেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা আলী, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, একশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সি আর আবরার।

এ ছাড়াও স্বাক্ষকারীরা হলেন- আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, অধ্যাপক ও গবেষক স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের গোলাম মোনোয়ার কামাল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও অধ্যাপক নায়লা জামান খান প্রমুখ।