প্রবীণদের প্রতি ৫ জনের ৪ জন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন : আইসিডিডিআর,বি

প্রবীণদের প্রতি ৫ জনের ৪ জন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন : আইসিডিডিআর,বি

প্রবীণদের প্রতি ৫ জনের ৪ জন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন : আইসিডিডিআর,বি

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণা বলছে যে, দেশে প্রবীণদের প্রতি পাঁচ জনের চার জন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন। 

এই অবস্থায় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সেবাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা জোরদার করার সুপারিশ করেছেন গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা।  

‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১’ উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত একটি অনলাইন ওয়েবিনারে গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা এসব কথা বলেন।

আইসিডিডিআর,বি’র কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার একে এম তারিফুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবীণদের (৬০ বছর বা ততোর্দ্ধ) প্রতি ৫ জনের ৪ জনই উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং বিষণ্নতার মত অসংক্রামক রোগে ভুগছে। 'আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১' উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনলাইন ওয়েবিনারে প্রবীণদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ও ইনিশিয়েটিভ ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ড.আলিয়া নাহিদ। দেশব্যাপী পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে প্রবীণদের প্রতি দু’জনের মধ্যে এক জন যে কোন একটি অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এছাড়া প্রবীণ পুরুষদের তুলনায় (৩৭ শতাংশ) প্রবীণ নারীদের (৫৪ শতাংশ) অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা দলের প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী ২ হাজার ৭৯৫ জন প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের একটা চিত্র পাই যা বেশ উদ্বেগজনক। সর্বশেষ আদমশুমারী ২০১১ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশ ৪৮ শতাংশ প্রবীণ ছিল যা ২০৪১ সালে দ্বিগুন হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্য প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাকে তাদের দোরগোড়ায় নেয়া উচিত এবং সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।’ প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাকে জোরদার করার জন্য নতুন উদ্বাবনী ব্যবস্থার মাধ্যমে যুবকদেরকে প্রবীণদের সেবায় সম্পৃক্ত করার উপর ড. নাহিদ জোর দিয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ প্রবীণদেও মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ, এবং যেসব রোগ প্রবীণদের মাঝে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সেসব মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা ও সহযোগিতামূলক কাজ করতে হবে।’

ওয়েবিনারে প্রবীণদের সেবাকে আরও কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-ইপিডিমিওলজি ও গ্লোবালএইজিংয়ের অধ্যাপক ড. ব্লোসম স্টেফান। প্রবীণদের সেবা আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা প্রমানভিত্তিক জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রবীণ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য সুপারিশ করেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও রেসপাইরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন কোভিড-১৯ মহামারী সময়ে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীনদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ করেন। 

প্যানেল আলোচনায় আর অংশগ্রহণ করেন নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. লোচানা শ্রেষ্ঠা, নেপালের পাটান একাডেমির ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রভাষক ডা. সুনীল অধিকারী, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ্ নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর অধ্যাপক ট্রুডি লাং। এছাড়াও বক্তব্য দেন নেপালের পাটান একাডেমির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক রাজেশ নাথ গোঙ্গল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো জাহিদ হোসেন ও নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ডা. মহেশ মাস্কি ।

সূত্র : ইউএনবি