আফগানিস্তানে শিগগির খুলে দেয়া হবে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল

আফগানিস্তানে শিগগির খুলে দেয়া হবে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল

আফগানিস্তানে শিগগির খুলে দেয়া হবে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে শিগগিরই মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল খুলে দেয়া হবে।রোববার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারি সাইদ খোসতি কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে এই তথ্য জানান।তবে বিদ্যালয় খোলার নির্দিষ্ট তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

কারি সাইদ খোসতি বলেন, ‘আমার অনুধাবন ও তথ্য অনুযায়ী, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সব বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল খুলে দেয়া হবে এবং সব মেয়ে ও নারীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষকতার পেশায় ফিরে যাবে।’

এর আগে গত আগস্টে তালেবানের আফগান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ছেলেদের সব স্কুল ও মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে ‘নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ’ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার জন্য বলা হয়।

মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়েদের স্কুল বন্ধ রাখায় ওই সময় ধারণা করা হয়েছিলো তালেবানের প্রথম আমলের মতোই মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা ও কর্মের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে।এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তালেবান সমালোচনার শিকার হয়েছিলো।এমনকি তালেবানের সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বানকারী কাতার ও পাকিস্তানও এর জন্য নিন্দা জানায়।

১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধরত বিভিন্ন পক্ষকে পরাস্থ করে প্রথম দফায় দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে তালেবান। সশস্ত্র রাজনৈতিক দলটি আফগানিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হলেও দলটির কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি ও পদক্ষেপ সমালোচনার সৃষ্টি করেছিলো।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়ে থাকা আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।

তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।

তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে।

এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।

২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরেরও মৃত্যু হয়।

তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে।

দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ডেডলাইন থাকলেও ৩০ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়।

মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।

৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। তালেবান যোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকায় ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। গনির কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জেরে আফগান প্রশাসন ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দিনই কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা।

তবে কাবুলের উত্তরের দুর্গম পাঞ্জশির প্রদেশ শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গিয়েছিলো। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধারা এই উপত্যকায় অবস্থান নিয়েছিলো।

৬ সেপ্টেম্বর পাঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান। এর পর ৭ সেপ্টেম্বর দলীয় প্রধান মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে রাষ্ট্রপ্রধান ও রাহবারি শুরার সদস্য মোল্লা হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় দলটি।

সূত্র : আলজাজিরা