পাবনায় টানা ৪৮ ঘন্টার বৃষ্টিতে পেঁয়াজ, ধান, শব্জির ব্যাপক ক্ষতি

পাবনায় টানা ৪৮ ঘন্টার বৃষ্টিতে পেঁয়াজ, ধান, শব্জির ব্যাপক ক্ষতি

পাবনায় টানা ৪৮ ঘন্টার বৃষ্টিতে পেঁয়াজ, ধান, শব্জির ব্যাপক ক্ষতি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পাবনা জেলায় টানা ৪৮ ঘন্টা বৃষ্টিতে পাকা আমন ধান, পেঁয়াজ, শব্জি ও কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া, বৃষ্টি ও বাতাসে পাকা আমনধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় শত শত একর জমির পেঁয়াজ বেচন নষ্ট হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মুলকাটা পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের বীজতলা (দানা) থেকে যে পোয়াল/ বেচন(বীজ/ চারা) ফলানো হয়; শত শত বিঘা জমির বেচন এখন দু’দিনের টানা বৃষ্টির পানির নিচে। তাই পেঁয়াজ চাষিরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই বীজ বাঁচানো না গেলে  পেঁয়াজ উৎপাদন হবে না।

উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশের চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খ্যাত পাবনা। এ জেলার  সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার হাজার হাজার একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যে তৈরি বেচন নষ্ট হয়ে গেলে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে মারাত্বভাবে বিঘ্নিত হবে। যদি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হয়; তবে  পেঁয়াজ উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটার আশংকা রয়েছে।এছাড়া জেলার সব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠে পাকা ধানের জমিতে পানি জমে গেছে এবং মাঠে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। এখন সেই ধান ঘরে তুলতে চরমভাবে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকের।বিনষ্ট হয়েছে শব্জি খ্যাত পাবনা অ লের শীতকালীন বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি।

পাবনা সদর উপজেলার মাহমুদপুর-বেরুয়ান এলাকার কৃষক আবুল বাশার জানান,‘আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে ভাসছে। সব মাঠে পানিবদ্ধতার কারণে পাকা ধান কাটা খুবই অসুবিধার মধ্যে মড়েছে কৃষক। বিভিন্ন উপজেলাতে একই অবস্থা বলে স্থানীয়রো জানান। এটা বড় ধরণের একটা ধাক্কা বলে অভিহিত করছেন ভূক্তভোগী কৃষকরা।

এদিকে মঙ্গলবার পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে দুপুরে এ ব্যাপারে যখন কথা বলি; তখন তিনি সুজানগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কোন কিছু ক্ষতি হয়েছে কী না তা পরিদর্শণ করছিলেন। কোন কিছুই ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ চারা পেঁয়াজের মাঠের কোন অসুবিধা যাতে না হয়; সে ব্যাপারে পদ্ধতিগত কাজ করা হচ্ছে। তবে সরিষা ও গমের জন্য এ বৃষ্টি ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান।  সমূহ অথচ পাবনা কৃষি বিভাগ বলছে এ বৃষ্টিতে কোন কিছুর ক্ষতি তো হয়নি; বরং কাছে গমসহ অনেক ফসলের ক্ষেত্রে নাকি ভালো হযেছে। 

এদিকে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জেলার ইটভাটার তৈরিকৃত কাঁচা ইট। টানা দু’দিনের অসময়ের বৃষ্টিতে তিন কোটিরও বেশি কাঁচা ইট পানির সাথে মিশে ভেসে গেছে বলে সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। পাবনা জেলা ইউভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম জানান,‘ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে জেলায় টানাটানা দু’দিনের বৃষ্টিতে জেলার নয় উপজেলায় তিন কোটির বেশি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কাঁচা ইট গলে পানির সাথে মিশে গেছে। পানি নিষ্কাষণ না হওয়া পর্যন্ত হাজার হাজার ইট শ্রমিক বেকারত্ব হয়ে থাকতে হবে।

পাবনার সুজানগরের ইটভাটাগুলোর বিপুল পরিমাণ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কমপক্ষে ২ কোটি টাকা মূল্যের  কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভাটার মালিকেরা।উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সমিতির তালিকাভূক্ত ১৫টি ইটভাটা রয়েছে। দু’দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।উপজেলার তাঁতিবন্দের এইচ এম এফ ইটভাটা মালিক আব্দুল হালিম জানান, প্রতিটি কাঁচা ইট তৈরি করতে চার থেকে পাঁচ টাকা খরচ হয়। অসময়ের আকষ্মিক বৃষ্টিপাতের ফলে ৩ লক্ষাধিক কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।

দু’লক্ষাধিক কাঁচা ইট নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছেন একই উপজেলার কামারদুলিয়ার ইটভাটা মালিক আবদুস সবুজ।ইটভাটা মালিক কোরবান আলী জানান, উপজেলার সব ইটভাটা মালিকই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ভাটা মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ব্যাংকের লাভের টাকা ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। টানা বৃষ্টির কারণে ইটভাটাগুলোর শত শত শ্রমিক বেকার বর্তমান বেকারত্ব জীবন যাপন করছে।