দু’বছরেও অজানা করোনার উৎস!

দু’বছরেও অজানা করোনার উৎস!

ছবি: সংগৃহীত

ঠিক দু’বছর আগের কথা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই চীনের উহানে ধরা পড়েছিল এক রহস্যময় জ্বর। পরের দু’টি বছরে কোটি কোটি সংক্রমণ ঘটে গেছে গোটা বিশ্বে। ৫২ লাখের বেশি মৃত্যু। কিন্তু গত দু’বছরেও জানা যায়নি সার্স-কোভ-২-এর উৎস।

বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, কোনো বনাঞ্চলে ভাইরাসটির জন্ম হয়েছিল। হয় বাদুড়ের শরীর থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে এসেছিল ভাইরাসটি। নয়তো বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণীর দেহ হয়ে মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটে। আবার বিজ্ঞানীদের অন্য একটি দল মনে করে, ভাইরাসটি ছড়িয়েছে চীনের গবেষণাগার থেকে। কিন্তু এর নিশ্চিত উত্তর কারো কাছে নেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর উত্তর কোনো দিন জানাও যাবে না। এ অবস্থায় অধিকাংশ বিজ্ঞানী এই তত্ত্বটিতেই জোর দিচ্ছেন, সংক্রমণটি ‘জুনোটিক’, অর্থাৎ প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটেছিল। তাদের বক্তব্য, ভবিষ্যতে নতুন ভাইরাস বা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ সামলানোর ক্ষেত্রে করোনা অতিমারি থেকে নেয়া শিক্ষা কাজে দেবে।

উটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্টিফেন গোল্ডস্টাইন বলেন, ‘গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর তত্ত্বটি অনেকের নজর কেড়েছিল। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।’ এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট অগস্ট মাসে ‘সেল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গোল্ডস্টাইন-সহ ২০ জন বিজ্ঞানী একত্রে রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন।

এই রিপোর্টের মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মাইকেল ওরোবে। তিনি গোড়া থেকেই গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর তুলনায় জুনোটিক সংক্রমণে জোর দিয়েছেন। তবে কোনো তত্ত্বকেই পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তিনি। বলেছেন, ‘সব কিছুই হতে পারে। কিছুই অসম্ভব নয়।’ এই রিপোর্টে অবশ্য জানিয়েছেন, অন্য গবেষকদের সাথে আলোচনা করে, যা কিছু তথ্যপ্রমাণ রয়েছে সব খতিয়ে দেখে ‘জুনোটিক হাইপোথিসিস’-ই আরো স্পষ্ট হচ্ছে।

গত মাসে ওরোবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করেছিলেন। সেই রিপোর্টে তিনি লিখেছিলেন, উহানের হুয়ানান সিফুড হোলসেল বাজার থেকে প্রথম মানবদেহে সংক্রমণটি ঘটেছিল বলে জানা যায়। এই বাজারে জীবিত জন্তু-জানোয়ার বিক্রি হয়। ওরোবের কথায়, ‘গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর থিয়োরি একপ্রকার মূল ঘটনা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিয়েছিল।’

তবে কেউই কোনো থিয়োরিতে জোর দিয়ে সমর্থন করছেন না। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার গোয়েন্দা বাহিনীকে মহামারি-তদন্ত ভালো করে পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট তৈরি হওয়া এখনো বাকি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য আশঙ্কা, মহামারীর উৎস কোনো দিন জানা যাবে না।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা