কন্যা সন্তান : সৌভাগ্যের বার্তাবাহক

কন্যা সন্তান : সৌভাগ্যের বার্তাবাহক

কন্যা সন্তান : সৌভাগ্যের বার্তাবাহক

কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের বার্তাবাহক। এটি যারা উপলব্ধি করতে পারেন এবং তাদের লালন করেন, তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই যে সফলকাম হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে লোক দু’টি মেয়ে সন্তানকে লালন-পালন করবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে যাবো। এই বলে তিনি নিজের হাতের দু’টি আঙুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।’ (তিরমিজি-১৯১৪)

হজরত আয়েশা রা: বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়ে সন্তানসহ আমার কাছে এসে কিছু চাইল। সে আমার কাছে মাত্র একটি খেজুরই ছিল। আমি তাকে তাই দিলাম। সে তা গ্রহণ করে তা দু’ভাগে ভাগ করে দু’মেয়েকে দিলো। নিজে কিছুই খেলো না। তারপর সে দাঁড়িয়ে গেল এবং বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সা: আমার কাছে প্রবেশ করলে আমি তাকে ওই মহিলা এবং তার মেয়েদের সম্পর্কে জানালাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘যে কেউ মেয়েদের নিয়ে দুঃখ কষ্টে পড়বে এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, সেগুলো তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (বুখারি-১৪১৮, মুসলিম-২৬২৯)

রাসূলুল্লাহ সা: নিজের জীবনে কন্যা সন্তানের প্রতি কেমন ভালোবাসা থাকা উচিত, তার নজির স্থাপন করেছেন। ফাতেমা রা:সহ মেয়েদের সাথে তাঁর উত্তম আচরণ ও মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ প্রেরণা জোগায়। বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায়- হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা:-এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতেমা রা: আমাদের কাছে আগমন করলেন। তাকে দেখে নবী সা: বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে মোবারকবাদ। অতঃপর তাকে তার ডানপাশে অথবা বাম পাশে বসালেন এবং তার সাথে চুপিচুপি কথা বললেন। তখন ফাতেমা রা: কেঁদে দিলেন। আমি (আয়েশা রা:) তাকে বললাম, কাঁদছেন কেন? নবী সা: পুনরায় চুপিচুপি তার সাথে কথা বললেন।

ফাতেমা রা: এবার হেসে উঠলেন। আমি (আয়েশা রা:) বললাম, আজকের মতো দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশি আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (রাসূল সা:) কী বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আল্লাহর রাসূলের গোপন কথাকে প্রকাশ করব না। শেষে নবী সা:-এর ইন্তেকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাকে (আবার) জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কী বলেছিলেন?’ জবাবে তিনি বললেন, তিনি (রাসূল সা:) প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরাইল আ: প্রতি বছর একবার আমার সাথে কুরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় বেলা উপস্থিত এবং অতঃপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। অতঃপর বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসী নারীদের অথবা মুমিন নারীদের তুমি সরদার হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।’

অথচ কন্যাদের ব্যাপারে অনেকেই উল্টো আচরণ করেন। মেয়েদের ব্যাপারে হন উদাসীন। কোনো কোনো পরিবারে মেয়েদের কদর নেই বললেই চলে! ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভবতী নারীদের নানা টেস্ট করতে হয়। তন্মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম অন্যতম। টেস্টের পর গর্ভবতী নারী কিংবা স্বজনরা গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে; জানতে চান। অনেক অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী ডাক্তার এ ব্যাপারে তথ্য দিতে চান না। কেননা, কন্যা সন্তানের সংবাদ পেলে কোনো কোনো পরিবারে অসন্তোষ প্রকাশ ও সুন্দর আচরণের পরিবেশ বিনষ্ট হতে দেখা যায়! যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট হয়।’ (১৬. সূরা আন-নাহল-৫৮) পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানির কারণে সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও কি তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত নেয় তা কত নিকৃষ্ট!’ (১৬:৫৯)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে আহসানুল বায়ানে বর্ণিত হয়েছে- কন্যা জন্মের সংবাদ শুনে তাদের এই অবস্থা হয়, যা বর্ণিত হয়েছে, অথচ আল্লাহর জন্য তারা কন্যা নির্ধারণ করে। তাদের সিদ্ধান্ত কতই না অসঙ্গত। অবশ্য এখানে এটা ভাবা উচিত নয় যে, মহান আল্লাহও পুত্রের তুলনায় কন্যাকে তুচ্ছ মনে করেন। না, আল্লাহর কাছে পুত্র-কন্যার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, আর না লিঙ্গ বা জাতিভেদের দিক দিয়ে তুচ্ছ বা মর্যাদাসম্পন্ন করার কোনো ব্যাপার আছে।

এখানে শুধুমাত্র আরবদের একটি অন্যায় ও গর্হিত রীতিকে স্পষ্ট করাই আসল উদ্দেশ্য। যা তারা আল্লাহর ব্যাপারে পোষণ করত; যদিও তারাও আল্লাহর সম্মান ও বড়ত্বকে স্বীকার করত। যার যুক্তিসঙ্গত ফল এই ছিল যে, যে জিনিস তারা নিজেদের জন্য পছন্দ করে না, সেটিকে আল্লাহর জন্যও নির্ধারণ করবে না। কিন্তু তারা তার বিপরীত করল। এখানে শুধু এই অন্যায় আচরণকেই স্পষ্ট করা হয়েছে।

মুমিন হিসেবে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর নির্দেশনার আলোকেই পথ চলতে হবে। এর বিপরীত ভূমিকা পালনের সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সা: কথা ও কাজে যে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, তা অনুসরণ করা জরুরি। জাহিলিয়াত যুগের মানুষের মতো তৎপরতা মোটেও কাম্য নয়।

সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন