পশ্চিমবঙ্গে উৎসব আর ভোটের আয়োজনে করোনা বাড়ার আশঙ্কা

পশ্চিমবঙ্গে উৎসব আর ভোটের আয়োজনে করোনা বাড়ার আশঙ্কা

পশ্চিমবঙ্গে উৎসব আর ভোটের আয়োজনে করোনা বাড়ার আশঙ্কা

নতুন বছরে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ৷ এরইমধ্যে বিধি ভেঙে বর্ষবরণে মেতে উঠেছে বাঙালি৷ অথচ কোভিড সংক্রমণ দৈনিক ৩৫ হাজার ছুঁতে পারে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের৷২০২০ সালে কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গে একদিনে সর্বাধিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার একশ ৫৭৷ দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় এই সংখ্যাটি পাঁচগুণ বেড়ে যায়৷ গত বছরের ১৪ মে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার আটশ ৪৬ জন৷

কোভিডের তৃতীয় পর্বে করোনার প্রকোপ অতীতের সব পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ তাঁদের মতে, করোনার সংক্রমণ দৈনিক ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলো জানাচ্ছে, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে বেশি মানুষ কোভিড উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন৷

বড়দিনের পরপরই বিশেষজ্ঞরা করোনা বিষয়ে বিপদের সতর্কবাণী দিয়েছেন৷ তবে তাতেও হেলদোল হয়নি জনতার৷ ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণের রাতে জেলা শহর থেকে কলকাতায় হুল্লোড়ে মেতেছে বাঙালি৷ পার্ক থেকে পাব, সমুদ্রতট থেকে রেস্তোরাঁ, সর্বত্রই থিকথিকে ভিড়৷ অথচ শুক্রবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৫১ জন৷ এরমধ্যে কলকাতায় আক্রান্ত ১৯৫৪ জন৷ শনিবার সকালের হিসেব অনুযায়ী, দেশে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত ২২ হাজার সাতশ ৭৫ জন৷ ওমিক্রন মিলেছে এক হাজার চারশ ৩১ জনের শরীরে৷ আর কলকাতায় ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭৷ঢেউ শুরু হয়ে

রাজ্যে করোনায় যতজন আক্রান্ত তার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কলকাতার৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী  বলেন, ‘‘বড়দিনের ভিড়ের ফল আমরা এখনো পাইনি৷ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার রিপোর্ট আসবে৷ এখন কলকাতায় করোনার যে ছবি, তা পুরভোটের জের৷ নির্বাচনের সভা-সমিতি, মিছিল, সমাবেশ, শপথ অনুষ্ঠানের ভিড় থেকে এই সংক্রমণ৷ ইতিমধ্যে পজিটিভিটি রেট বাড়তে শুরু করেছে৷ সরকারি ল্যাব তো বটেই, বেসরকারি ল্যাবেও প্রচুর পজিটিভ ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়৷’’

এই পরিস্থিতিতে রাজধানী দিল্লি এবং বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের উৎসব নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা করা হয়নি৷করোনার নৈশবিধি ২৪ ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে৷ ৩ জানুয়ারির পর্যালোচনা বৈঠকের পর নিয়ন্ত্রণ জারি হবে৷ গত ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘গত দুবছর লকডাউন দেখেছি আমরা৷ মানুষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে৷ কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়েছে৷ তাই এখনই লকডাউন করা হবে না৷’’

এদিকে চার পুরনিগমের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে৷ শুরু হয়েছে প্রচার৷ ভোটের সমাগমে করোনা বাড়তে পাড়ে আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকদের অনেকে৷

ভাইরোলজিস্ট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন পরামর্শদাতা ডাঃ অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘কোভিড রাজনীতিকদের খেলা হয়ে গিয়েছে৷ আমরা প্ৰথমে জেনেছি যে, মানুষ কাছাকাছি এলে কোভিড ছড়াবে৷ তাহলে ২৫ ও ৩১ ডিসেম্বর পার্ক স্ট্রিটে এত লোকের ভিড় হল কেন? যদি ওমিক্রনের তৃতীয় ঢেউ আসে, তার জন্য সরকার দায়ী৷’’তবে করোনার বিধি আরোপ করতে গিয়ে যে মানুষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি৷

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সদস্য চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দেশে লকডাউন হলে সরকারের একটা দায়িত্ব থাকে৷ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা নেই৷ বরং উৎসবকে প্রাধান্য দেয়া হয়৷ এটা সরকারের ব্যর্থতা বলা যেতে পারে৷’’এদিকে নতুন বছরের শুরুতে গঙ্গাসাগর মেলা৷ তার প্রস্তুতি চলছে৷ এ ধরনের মেলায় করোনা ভাইরাসের ‘সুপার স্প্রেডার' হতে পারে আশঙ্কায় তা বাতিল করার দাবি তুলছেন চিকিৎসকরা৷

এর ফলে কী পরিস্থিতি হতে পারে?  ডাঃ গোস্বামী বলেন, ‘‘ওমিক্রনের উপসর্গ কম৷ কিন্তু বয়স্ক মানুষ বা যাদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের জন্য বিপজ্জনক৷’’তৃতীয় ঢেউ কার্যত এসে পড়ায় কলকাতা বইমেলার আয়োজনে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গিয়েছে৷ ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি মেলা হওয়ার কথা যার মূল ভাবনায় এবার বাংলাদেশ৷

বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড-এর কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়  বলেন, ‘‘গত নভেম্বরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করে এই ঘোষণা করেছিলেন৷ এখন আমরা আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে চলেছি৷ রাজ্য সরকার যা বলবে, সেই অনুযায়ী হবে৷’’

এদিকে সাত জানুয়ারি কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব শুরুর কথা৷ নজরুল মঞ্চের বদলে এবার নবান্ন সভাগৃহ থেকে উৎসবের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করা হবে৷ কিন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শন হবে কি? সোমবার সরকার কী বলে, সে দিকেই তাকিয়ে সব মহল৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে