বাংলাদেশে ধান কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন, বাজারে আসবে কবে?

বাংলাদেশে ধান কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন, বাজারে আসবে কবে?

বাংলাদেশে ধান কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন, বাজারে আসবে কবে?

বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ধান কাটার এক নতুন যন্ত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন।তারা বলছেন, এই যন্ত্র বা হারভেস্টারটির দাম আমদানি করা হারভেস্টারের তুলনায় অর্ধেক, কিন্তু প্রচলিত যন্ত্রের চাইতে ধান কাটার সক্ষমতা বেশি।বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এই হারভেস্টার ছোট জমির ধান কাটতে পারদর্শী।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান কাটার যন্ত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেওয়া সাধারণ ছুটির সময় হাওরে ধান কাটতে শ্রমিকের ব্যাপক সংকট দেখা দিলে এর বিক্রি ও চাহিদা বৃদ্ধি পায়।কিন্তু বাংলাদেশে হারভেস্টার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে, সাধারণত জমিতে বিভক্তিকরণ আইল দেয়া থাকে বলে জমির আকার ছোট হয়, এর ফলে বাজারে প্রচলিত ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে ধান কাটা যায় না।

এছাড়া আমদানি করা হারভেস্টারের দাম অনেক বেশি, যা প্রান্তিক কৃষকের নাগালের বাইরে।কিন্তু ব্রি-র বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্র এসব সমস্যা দূর করবে।

নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক একেএম সাইফুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, যন্ত্র উদ্ভাবনের সময় তারা মোট ১৯টি বৈশিষ্ট্যের দিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন।

এটি ছোট জমির ধান কাটতে বেশ কার্যকর।

ঘণ্টায় মেশিনটি তিন থেকে চার বিঘা জমির ধান কাটতে পারে।

জ্বালানি খরচ হয় ঘণ্টায় চার লিটার।

দাম হবে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা, আমদানি করা যন্ত্রের দাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

হারভেস্টিং লস অর্থাৎ ধান কাটার সময় শস্য নষ্ট হয় তার পরিমাণ শতকরা এক ভাগের কম।

কাদায় চলবে এই যন্ত্র।

ফোর সিলিন্ডার মেশিন বলে শব্দ অনেক কম করে।

বাজারে পাওয়া যাবে কবে

প্রকল্প পরিচালক মি. ইসলাম বলেছেন, চুয়াডাঙার নুরনগরে পরীক্ষা করা হয়েছে হারভেস্টারটি, এবং মাঠে পরীক্ষা করে ভালো ফল মানে এর কার্যকারিতা প্রমাণের ফল পেয়েছেন তারা।এরপর ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ৩১শে ডিসেম্বর।তিনি বলছেন, হারভেস্টারটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা গেলে দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।কিন্তু বাজারে এখুনি পাওয়া যাবে না এ যন্ত্র।

তিনি বলছেন, "আমরা গবেষণার কাজটি করেছি, এ মডেল দেশের কৃষিক্ষেত্রে সময়, খরচ এবং শ্রম তিন-ই বাঁচাবে, তা প্রমাণ করেছি আমরা। কিন্তু ম্যাস প্রোডাকশনের জন্য সরকার অথবা উদ্যোক্তাদের এগ্রিয়ে আসতে হবে।""কারণ, এ ধরণের যন্ত্র বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে হলে যে ওয়ার্কশপ লাগবে তা আমাদের দেশে নাই।

ফলে এটি সরাসরি সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, অথবা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কেউ উদ্যোগী হয়ে যদি এ প্লান্ট স্থাপন করে তাহলে সেটি সম্ভব," বলেন মি. ইসলাম।তবে তিনি বলেছেন, সরকারি পর্যায়ে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, এবং ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈঠকও তারা করেছেন।এ ধরণের একটি প্লান্ট তৈরির খরচ প্রায় ১০০ কোটি টাকার মত।

হারভেস্টারের দাম

বাংলাদেশে মূলত চীন এবং জাপান থেকে হারভেস্টার আমদানি হয়। এই দুটি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের একেক রকম দাম হয়।জাপানি যন্ত্রটির দাম তুলনামূলক বেশি, ২৭ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে এর দাম ওঠানামা করে।

অন্যদিকে, চীন থেকে আমদানি করা হারভেস্টারের দাম কিছুটা কম।বাংলাদেশে কৃষি উদ্যোক্তা কিংবা কোন কৃষক সমিতির মাধ্যমে হারভেস্টার কেনার ক্ষেত্রে মোট দামের অর্ধেক ভর্তুকি দেয় সরকার।হাওর এলাকায় সে ভর্তুকির পরিমাণ ৭০ শতাংশ।

সূত্র : বিবিসি