ফেরি স্বল্পতায় কাজিরহাট ফেরিঘাটে প্রায় ৪০০ ট্রাক আটকা

ফেরি স্বল্পতায় কাজিরহাট ফেরিঘাটে প্রায়  ৪০০ ট্রাক আটকা

ফেরি স্বল্পতার কারনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে প্রায় নয়শ’ শ্রমিকের অসহনীয় দুর্ভোগ,৬/৭ দিন ধরে ৪০০ ট্রাক আটকা রয়েছে

এম মাহফুজ আলম( পাবনা):  ফেরি স্বল্পতার কারনে যমুনা নদী পার হতে বুধবার পাবনার কাজিরহাট ফেরি ঘাটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। এতে করে কাজিরহাট-আরিচা রুটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চার শতাধিক ট্রাকের অন্তত: নয়শ’ শ্রমিক। পারাপারের অপেক্ষায় ৬/৭দিন কাজিরহাট ফেরিঘাটে অবস্থানরত এসব ট্রাক চালক ও হেলপারদের ভোগান্তির শেষ নেই। ঘাটে নেই কোন আবাসিক বা খাবার হোটেল। নেই কোন গোসলখানা-বাথরুম। খেয়ে না খেয়ে পারের অপেক্ষায় আছেন এসব শ্রমিক। 

অত্যন্ত স্বল্প পরিসরের দু’টি ফেরি চলাচল করছে এই নৌরুটে।  ছোট দু’টি ফেরিতে ধারণক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৬টি করে ট্রাক। তাও আবার ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর ফেরি আসে আর যায়। যার ফলে ঘাটে প্রতিদিন দীর্ঘ ট্রাকের লাইন থাকলেও বুধবার চার শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় অবস্থান করছিল। 

ঘাট সূত্রে জানা যায়, এ নৌরুটে  চলাচলকারী দু’টি ছোট ফেরির মধ্যে একটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। গত  কয়েকদিন ধরে শৃঙ্খলার বাইরে চলে গেছে। ফলে উভয় পাশে বিশাল টেলব্যাক তৈরি হয়েছে।

বুধবার ৪০০ টিরও বেশি যানবাহন নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। আরিচা ঘাটের দৃশ্যও অনুরুপ বলে ঘাটের এক কর্মকর্তা জানান।

কাজিরহাট (ফেরিঘাটের) টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডে আবুল কাইয়ম জানান,‘ সরকার মানুষের কল্যাণে যখন এ নৌরুটটি দীর্ঘদিন পর চালু করেছে; তেমনি যাতে মানুষ ভোগান্তিতে না পড়ে সেদিক সরকারকে দেখা উচিৎ। টয়লেট, গোসল, খাওয়া-দাওয়ার সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,এই কনকনে প্রচন্ড শীতে শ’ শ’ যানবাহন শ্রমিক নিদারুন কষ্টভোগ করছেন। শুধু মাত্র ফেরি স্বল্পতার কারনে আজ শ্রমিকদের এই দুর্গতি। তিনি কাজিরহাট-আরিচা রুটে আরো কয়েকটি ফেরি দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।    

কাজিরহাট ফেরি টার্মিনালের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে  বলেন.‘ ফেরি স্বল্পতার কারণে রুটটি এখন সবার কষ্টে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় ফেরি কর্তৃপক্ষ জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁ থেকে আসা ট্রাক চালক আনোয়ার আলী জানান, ছয়দিনের বেশি সময় ধরে তিনি কাজিরহাট ঘাটে মালামাল নিয়ে আটকে আছেন। কবে তার সিরিয়াল আসবে তাও তিনি জানেন না।

ঝিনাইদহ থেকে আসা ফার্ণিচার বোঝাই ট্রাক চালক মোহাম্মদ সবুজ ও তার সহকারী ( হেলপার ) সোহেল হেসেন জানান, তারা পারাপারের অপেক্ষায় পাঁচদিন ঘাটে গড়াগড়ি যাচ্ছেন। বাথরুম সমস্যাটা সব চেয়ে বড় সমস্যা বলে তারা জানান। একই সমস্যায় জর্জরিত শ’ শ’ শ্রমিক।

 বিআইডাব্লিইটিসি’র কাজিরহাট ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন,‘সম্প্রতি ফেরি কর্তৃপক্ষ পাঁচটি ফেরি সরবরাহ করলেও এর মধ্যে দু’টি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে দেয়া হয়েছে। এখন ক্যামেলিয়া ও কদম নামে মাত্র দু’টি ফেরি চলাচল করছে। সমস্যার কথা উল্লেখ করে এ রুটে বেশি ফেরি বরাদ্দের জন্য উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার জানানো হয়েছে।’

কয়েকযুগ পর এ ফেরি রুট উদ্বোধনের মাধ্যমে পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনওয়ানগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার মানুষ আবারও ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পারাপার হচ্ছে উল্লেখিত জেলাসমূহসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলারও পণ্যবাহী ট্রাক। কিন্তু  ফেরি স্বল্পতার কারনে দুর্ভোগের শেষ নেই।

রাজশাহী  থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে আট/নয় ঘণ্টা সময় লাগে এবং কাজিরহাট-আরিচা রুট উদ্বোধনের ফলে যাতায়াতের সময় কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যায় বলে জানান বিআইডাব্লিইটিসি’র ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান।

এদিকে বেশ কয়েকজন ট্রাক চালক অভিযোগ করেছেন,‘পারাপারের সিরিয়াল মেইন্টেনকারীরা দুর্ণীতির মাধ্যমে অনেক ট্রাক পারাপারের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা  পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকার ঘুষের বিনিময়ে এ ব্যবস্থা করছেন। এনিয়ে মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) রাতে সেখানে চরম বিবাদের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সিরিয়াল মেইন্টেনকারীদের সাথে হাতাহাতি পর্যন্তও হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামান্য সমস্যার কথা স্বীকার করে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলেন,‘আর কোন সমস্যা নেই।’