গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, ভোগান্তির নানা আয়োজন

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, ভোগান্তির নানা আয়োজন

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, ভোগান্তির নানা আয়োজন

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে প্রায় সব শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে দেশের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে পড়ার। তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন খুব একটা সহজে হয় না। দিন-রাত পরিশ্রম করে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়। একটি আসন পেতে করতে হয় তুমুল প্রতিযোগিতা। আবার ভোগান্তিরও যেন শেষ নেই। দেশের নানা প্রান্তে ছুটে যেতে হয়।

এতে করে সবচেয়ে বিপদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা। যাদের ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য হয়ে উঠেনা। সম্প্রতি দেশের ২০ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়াতে নানা আয়োজন খুলে বসে আছে। অনেক আলোচনা-সমালোচনা পার করে এবছর অনুষ্ঠিত হয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।

ইউজিসির সিদ্ধান্তে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও এই ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি পরবর্তী কার্যক্রম ঘিরে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২০০ টাকা করে। যেহেতু ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় তাই ১২০০ টাকা মেনে নেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের পরে নতুন করে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা ফি দিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভাগভিত্তিক আবেদন করতেও আলাদা আলাদা ফি দিতে হয়েছে। ধরুন, এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করল। তাকে ঐ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। যদি নিজের বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগে আবেদন করতে চায় তাহলে গুনতে হবে আলাদা ফি।

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিলো আর্থিক ও যাতায়াত ভোগান্তি কমিয়ে আনা। কিন্তু এবারের গুচ্ছ পরীক্ষার দিকে তাকালে বুঝা যায়, আর্থিক ও যাতায়াতে কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলাফলের পরে একজন শিক্ষার্থীকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ছুটতে হচ্ছে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। গুচ্ছ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটা ভাল দিক এটাই যে, সারা বাংলাদেশ ঘুরে পরীক্ষা দেওয়ার হয়রানি থেকে মুক্ত হওয়া। কিন্তু এই হয়রানি থেকে মুক্ত হওয়া হলো কোথায়? সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য সেই আগের নীতিই মানতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

আবার একই দিনে গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী নিজের জেলা থেকে আবেদন করেও তার পরীক্ষা দিতে হয়েছে অন্য জেলায়৷ যেমন কক্সবাজারের এক শিক্ষার্থী আবেদন করল কক্সবাজার থেকে কিন্তু তাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে পটুয়াখালী গিয়ে। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রিক আমেজ হারাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যে উৎসব ও আনন্দের পরিবেশ সৃষ্ট হতো তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে।

একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক রীতি নতুন এক ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মাঝে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের জিপিএ নির্ধারণ করার নিয়ম একেক বিশ্ববিদ্যালয় একেকভাবে নির্ধারণ করেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে এসএসসি পরীক্ষায় ১০০ ও এইচএসসি পরীক্ষায় ১০০ নাম্বার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তোপের মুখে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আবারও আলাদাভাবে তাদের মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে। কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভাইভা দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট কয়েকদিনের মধ্যে ভর্তি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

 ফলে আলাদাভাবে ভর্তি হতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পছন্দের সাব্জেক্টে ভর্তি হওয়ার জন্য, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের দৌড়ের উপর রাখার প্রতিযোগিতার'ই যেন আয়োজন করেছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।

 যাতায়াত ফি, আবেদন ফি ও ভোগান্তি শেষ হওয়ার কথা থাকলে আদতে তা হয়নি। আগের মতোই (গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া) সবকিছু মেনেই ভর্তি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বড় একটা সাইনবোর্ডে বড় বড় অফার দিয়ে ভোক্তাকে ঘায়েল করার জন্য নিচে ছোট করে শর্ত প্রযোজ্যের মত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নামে এই আয়োজন।

রুদ্র ইকবাল : শিক্ষার্থী,  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।