মুম্বাইয়ে রণতরীতে বিস্ফোরণ, ভারতীয় নৌবাহিনীর তিন সদস্য নিহত

মুম্বাইয়ে রণতরীতে বিস্ফোরণ, ভারতীয় নৌবাহিনীর তিন সদস্য নিহত

মুম্বাইয়ে রণতরীতে বিস্ফোরণ, ভারতীয় নৌবাহিনীর তিন সদস্য নিহত

ভারতের মুম্বাইতে একটি রণতরীতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নৌবাহিনীর তিনজন সদস্য নিহত এবং আরও অন্তত এগারোজন গুরুতর আহত হয়েছেন।আইএনএস রণবীর নামে বেশ পুরনো ওই যুদ্ধজাহাজটি মুম্বাইয়ের ন্যাভাল ডকইয়ার্ডে মোতায়েন ছিল, সেখানেই মঙ্গলবার বিকেলে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আজ বুধবার নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে হতাহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ জানতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে - গত মাসেও তামিল নাডুতে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত-সহ অনেকে নিহত হয়েছিলেন।

বস্তুত ভারতীয় নৌবাহিনীর সবচেয়ে পুরনো রণতরীগুলোর একটি হল আইএনএস রণবীর - সোভিয়েত জমানার এই ডেসট্রয়ারটি ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে বাহিনীতে কমিশন করা হয়।ভারতীয় নৌবাহিনীতে যে ডেসট্রয়ারগুলোকে 'রাজপুত ক্লাস' বলে চিহ্নিত করা হয়, এটি সেই সিরিজেরই চতুর্থ রণতরী।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে আইএনএস রণবীর-কে ইস্টার্ন ন্যাভাল কমান্ড 'ক্রস কোস্ট অপারেশনাল ডেপ্লয়মন্টে' কাজে লাগিয়েছিল - অর্থাৎ সেটি ভারতের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূলে পাড়ি দিচ্ছিল, এবং খুব শিগগিরই এটির বেস পোর্টে ফিরে আসারও কথা ছিল।

কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার বিকেলে রণতরীটি যখন মুম্বাইতে ডকড ছিল, তখনই বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার ভেতর সেটিতে প্রচন্ড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার বেশি রাতের দিকে নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মুম্বাইয়ের ন্যাভাল ডকইয়ার্ডে 'এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায়' আইএনএস রণবীরের একটি অভ্যন্তরীণ কম্পার্টমেন্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ও তার জেরে নৌবাহিনীর তিনজন সদস্য প্রাণ হারান।আরও বলা হয়, বিস্ফোরণের পর রণতরীর ক্রুরা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এবং 'বড়সড় কোনও মেটেরিয়াল ড্যামেজ (জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি) এড়াতে সক্ষম হন'।

নৌবাহিনীর সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র বা গোলাবারুদের কোনও সম্পর্ক নেই - বরং রণতরীর বাতানুকূল যন্ত্রের কম্পার্টমেন্টেই এই বিস্ফোরণটি ঘটেছে।যে তিনজন নিহত হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই ঠিক তার ওপরের কম্পার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন।আজ বুধবার দুপুরে নৌবাহিনীর মুখপাত্র টুইট করে বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারগুলোর প্রতি নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার ও বাহিনীর সকলের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও জানান, যারা ওই বিস্ফোরণে মারা গেছেন তাদের নাম কৃষান কুমার (এমসিপিও ওয়ান), সুরিন্দর কুমার (এমসিপিও টু) এবং এ কে সিং (এমসিপিও টু)। এরা প্রত্যেকেই নৌবাহিনীর অত্যন্ত সিনিয়র নাবিকের পদমর্যাদায় ছিলেন, তবে তাঁরা কেউ অফিসার ছিলেন না।ভারতীয় নৌবাহিনীতে দুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণজনিত ট্র্যাজেডি বহুবারই ঘটেছে।

এর আগে ২০১৯-এর জুন মাসে মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে একটি নির্মীয়মান ডেসট্রয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে একজন কর্মী নিহত হয়েছিলেন।তারও আগে ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে আইএসএস সিন্ধুরক্ষক নামে নৌবাহিনীর একটি রুশ-নির্মিত কিলো-ক্লাস সাবমেরিনে বিধ্বংসী আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল - তাতে সাবমেরিনের ১৮জন কর্মীর সকলেরই মুম্বাইয়ের কাছে সলিলসমাধি হয়।

তা ছাড়া গত মাসেও তামিলনাডুতে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়লে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী ও আরও ১১জন সেনা সদস্য ও কর্মকর্তা নিহত হন।ওই ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত কমিটি বলেছে, 'খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পাইলটের ভুলেই' হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত হয়েছিল।

সূত্র  : বিবিসি