ক্যানসারে মৃত্যুও বাড়িয়েছে করোনা

ক্যানসারে মৃত্যুও বাড়িয়েছে করোনা

ক্যানসারে মৃত্যুও বাড়িয়েছে করোনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবোক্যানের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ১৫ লাখ ক্যান্সার রোগী আছে।এই সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ। আর তখন প্রতিবছর গড়ে মারা যেতো ৯২ হাজার। তখন দেশে মোট ক্যান্সার রোগী ছিল ১২ লাখ।

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রক্ত রোগ, ব্লাড ক্যান্সার ও বোনম্যারেন ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ ডা: মো: এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘২০২০ সালে আমাদের হাসপাতাল থেকে ২০ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০২১ সালে ২৫ হাজার। আর এখন তরুণরাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা প্রধানত লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিওলোজি বিভাগের প্রধান ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটিই বাড়ছে।’

তার কথা, ‘এরচেয়ে আরো উদ্বেগজনক তথ্য হলো ক্যান্সার আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ রোগীই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে, অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যান না। তারা হাতুড়ে ডাক্তার ও টোটকা চিকিৎসকের কাছে যান। এর প্রধান কারণ দুটি। ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাব।’

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্যান্সার চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, রোগীদের করোনা হওয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসা শেষ না করেই ৩০ শতাংশ রোগী বাড়ি ফিরছেন। চিকিৎসা শেষ না করা রোগীদের ৭৫ শতাংশই গত এক বছরের মধ্যে মারা গেছেন। আর ডা: মো: কামরুল হাসান বলেন, ‘আউটডোরে যারা আসেন তাদের ৫০ ভাগই কোনো ধরনের চিকিৎসা না নিয়ে চলে যান।’

তিনি জানান, ‘করোনার সময় যাদের ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয়া জরুরি ছিল তাদের কমপক্ষে ১০ ভাগ রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে পারেননি। ফলে তারা অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যান। এখন আবার যারা নতুন করে হাসপাতালে আসছেন, তাদের বড় একটি অংশ অ্যাডভান্স স্টেজে। ফলে করোনার কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারায় অ্যাডভান্স স্টেজের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা আমরা এখন বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে এরা চিকিৎসা পেলে দ্রুতই ভালো হয়ে যেতেন।’

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নতুন একটি এবং ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে আরো নতুন সাতটি স্বতন্ত্র ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ শুরু হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল।

ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে গড়ে দুই লাখ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যয় হয়।’

বংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এর শয্যা সংখ্যা এখন ৫০০। এর বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালসহ বিভাগীয় পর্যায়ের বড় বড় সরকারি হাসপাতালে আলাদা ক্যান্সার বিভাগ আছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা ২০০ জনের কিছু বেশি হবে।

বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা নিয়ে দেশের বাইরের সংস্থগুলো একটা হিসেব দিলেও বাংলাদেশে কোনো হিসাব নেই। নেই ক্যান্সার রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎিসকরা মনে করেন, যে হিসাব পাওয়া যায় বাস্তবে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, অনেকেরই ডায়াগনোসিস হয় না। আবার অনেকে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে তা প্রকাশ বা চিকিৎসা করাতে চান না। বিশেষ করে নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই গোপনীয়তা অনেক বেশি। আর নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সারেই আক্রান্ত হন বেশি।

বাংলাদেশে তিন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেশি। ব্রেস্ট ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার। তবে ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘সর্বশেষ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, খাদ্যনালীর ক্যান্সার অনেক বাড়ছে। এটা প্রথম স্থানে চলে যেতে পারে।’

ক্যান্সার চিকিৎসার তিনটি ধাপ সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। বাংলাদেশে এই তিন ধাপেরই এখন আধুনিক চিকিৎসা আছে বলে দাবি করেন ডা: এ টি এম কামরুল হাসান। তার মতে, এখন বেশি প্রয়োজন সচেতনতা, জনবল ও চিকিৎসা খরচ কমানো।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তরুণদের লিভার ক্যান্সার কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। সচেতন হলে আগেই ভ্যাকসিন নিলে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্তই হতেন না তারা।

সূত্র : ডয়চে ভেলে