আবার বাড়লো জেট ফুয়েলের দাম

আবার বাড়লো জেট ফুয়েলের দাম

ফাইল ছবি

উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বাড়লো আরও এক দফা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা। এ বছর একই মাসে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে জেট ফুয়েল কিনতে এয়ারলাইনসগুলো লিটারপ্রতি অতিরিক্ত খরচ করছে ২৫ টাকা করে। দাম বাড়ার এ হার ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। গত এক বছরে ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেলো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জ্বালানির দাম।

জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৬০ টাকা, এপ্রিলে তা হয় ৬১ টাকা। এইভাবে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে গভ নভেম্বরে ৭৭ টাকায় এসে পৌঁছায় জেট ফুইয়েলের দাম।

জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল বলছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা, মার্চে তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা। এপ্রিলে তা ছিল ৬১ টাকা।

মে মাসে এক টাকা কমেছে দাম। সে মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল সরবরাহ করা হয়েছে ৬০ টাকায়। এরপর আবারো দাম বাড়ে। জুনে তা হয় ৬৩ টাকা, জুলাই মাসে ৬৬ টাকা, আগস্ট মাসে ৬৭ টাকা এবং অক্টোবরে দাম হয় ৭০ টাকা। নভেম্বর মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল ৭৭ টাকায় এয়ারলাইনসগুলোকে সরবরাহ করছে পদ্মা অয়েল।

এরপর ডিসেম্বরে আবারো লিটারপ্রতি ২ টাকা দাম কমে। তখন জেট ফুয়েল সরবরাহ করা হয় ৭৫ টাকায়। জানুয়ারিতে আবার ২ টাকা দাম কমে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এক ধাপে ৭ টাকা বেড়ে জেট ফুয়েলের দাম হয়েছে ৮০ টাকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্যও জেট ফুয়েলের দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ সেন্ট বা ৬৪ টাকা। জানুয়ারি মাসে পদ্মা অয়েল প্রতি লিটার জেট ফুয়েল ৬৭ সেন্ট বা ৫৭ টাকায় সরবরাহ করেছে এয়ারলাইনসগুলোকে।

এক বছরের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫০ সেন্ট (৪২ টাকা), মার্চে ৫৫ সেন্ট (৪৬ দশমিক ৭৫ টাকা), মে মাসে ৫৬ সেন্ট (৪৭ দশমিক ৬ টাকা), জুনে ৫৯ সেন্ট (৫০ দশমিক ১৬ টাকা), জুলাইয়ে ৬২ সেন্ট (৫২ দশমিক ৭ টাকা), আগস্টে ৬৩ সেন্ট (৫৩ দশমিক ৫৫ টাকা), অক্টোবরে ৬৫ সেন্ট (৫৫ দশমিক ২৫ টাকা) এবং নভেম্বরে ৭৩ সেন্ট (৬২ দশমিক ০৫ টাকা)।

এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি ২২ টাকা। এ দাম বৃদ্ধির হার ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশের সাত অভ্যন্তরীণ রুটে গত বছরের জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। বছর ঘুরতেই তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকায়। একটি ফ্লাইটের টিকিটপ্রতি সরকার কর বা ট্যাক্স হিসেবে আদায় করে ৫২৫ টাকা। এর বাইরে যোগ হয় বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি হিসেবে ২০০ টাকা। অর্থাৎ ফ্লাইটের প্রতিটি টিকিট থেকে সরকার আদায় করছে ৭২৫ টাকা। এখন জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার প্রভাবে আগামীতে টিকিটের দামও বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের অতিরিক্ত দামের প্রভাবে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব দিন দিন কমতে থাকে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন বাজারের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো। এমনকি রিজেন্ট, জিএমজি এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেন তারা।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ টি এম নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, জেট ফুয়েল লিটারে ৮০ টাকা মানে অনেক বেশি। এটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয় সকলের জন্য। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে এয়ারলাইনসগুলোকে তাদের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আবারও চিন্তা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত এই বোঝা যাত্রীদের কাঁধে পড়বে এতে সন্দেহ নেই।

তিনি আরও বলেন, খরচ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে অনেক জায়গাতেই কম্প্রোমাইজ করতে হবে। এতে সেবার মানও কমে যেতে পারে।