গণহারে এমপিও ফাইল রিজেক্ট মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে খামখেয়ালিপনা

গণহারে এমপিও ফাইল রিজেক্ট মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে খামখেয়ালিপনা

ফাইল ছবি

এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিও নিয়ে চরম হয়রানির শিকার। এতে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে সদ্য নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকদের মধ্যে। নিায়োগপাওয়া প্রতিষ্ঠানে ভোগান্তির পর এবার শুরু হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরের ‘এমপিও ফাইল রিজেক্ট ভোগান্তি’। গেল কয়েকদিনে গণহারে এমপিও ফাইল রিজেক্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভূক্তভোগীরা জানান, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও নিয়োগের জন্য পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা এমপিও ফাইল নানাভাবে আটকিয়ে রাখছেন। ঘুষ না দিলে সেই ফাইল ছাড়ছেন না। সব ধরনের ডকুমেন্ট দিয়ে  নানা ভোগান্তি পোহানোর পর যথাযথভাবে আবেদনের পরও অযৌক্তিকভাবে বা কোন কারণ ছাড়াই এমপিও আবেদন রিজেক্ট করছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে আবেদন বাতিল হওয়ায় হতাশায় ডুবছে হাজারো চাকরীপ্রত্যাশী।

রাহাত মিয়া নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, নিয়োগ ও যোগদানে হয়রানির শেষ নেই। এমপিও আবেদনে পদে পদে ঘুষের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। যে শিক্ষকেরা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে নীতিনৈতিকতাকে সম্বল করে ছা-পোষা বেতনে শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাদের এভাবে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের কবলে পড়তে হবে, খুবই হতাশাজনক।

হতাশা জানিয়ে রাহাত বলেন, এই দেশে জন্ম নেওয়াই কি তাহলে আমাদের আজন্ম পাপ? এই দুর্নীতিবাজদের কাছে অসহায়ের মতো বারবার পরাজিত হওয়ার জন্যই কি ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনেছিল? এসব বিষয় নিয়ে যার সঙ্গেই কথা বলি, সে-ই বলেন, ঝামেলা না করে কিছু দিয়ে দেন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক বলেন, আমি সকল নিয়ম  মেনে এমপিও আবেদন করেছি। কিন্তু বয়স ৩৫ এর বেশি কারণ দেখিয়ে রিজেক্ট করে দিছে। কিন্তু আবেদনের সময় আমার বয়স ৩৪ বছর ছিল। এটা নিছক হয়রানি ছাড়া কিছুই না। এত কষ্ট করে আবেদন করেছি তা রিজেক্ট হয়ে গেল। এখন আবার আগামী মাসে আবেদন করতে হবে।

সাইফুল ইসলাম ভুক্তভোগী বলেন, শিক্ষকতায় এসে কি অপরাধ করলাম বুঝিনা। একটি এমপিও আবেদন করতে প্রায় অর্ধশত কাগজপত্র প্রয়োজন। সব গুছিয়ে আবেদন করেছি। সেটি রিজেক্ট করা হয়েছে। এত নিছক তামাশা।

গেল বছরের ১৫ জুলাই রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ওয়েবসাইটে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘদিনের মামলা জটিলতার পর এনটিআরসিএ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করে।

এর পর  পুলিশ ভেরিফাইয়ের নামে আবারও আটকে যায় নিয়োগ। পরে গেল ২১ জানুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য ৩৮ হাজার ২৮৩ জন চাকরিপ্রার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটে। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাঁদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ ইস্যু করে এনটিআরসিএ।

সে অনুযায়ী গেল ২১ জানুয়ারির পর থেকেই সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদান করা শুরু করে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োম মেনে গেল ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি তাদের অনেকেই এমপিওর জন্য আদেন করে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ( ১৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত  তাদের অনেকেরই আদেশ গণহারে বাতিল করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।  এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন বক্তব্য মিলেনি।