যশোরে ইউপি সদস্যদের হাতে তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, ইউপি সদস্যসহ আটক ৪

যশোরে ইউপি সদস্যদের হাতে তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, ইউপি সদস্যসহ আটক ৪

যশোরে ইউপি সদস্যদের হাতে তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, ইউপি সদস্যসহ আটক ৪

যশোরে মাহফিল থেকে ফেরার পথে এক তরুণীকে দুশ্চরিত্র আখ্যা দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন এক ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা। নির্যাতিতের অভিযোগ কোন কারণ ছাড়াই তার উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ওই নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। এ ঘটনায় মামলা দেয়ার পর পুলিশ ইউপি মেম্বারসহ চারজনকে আটক করেছে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের তরুণী ইতি খাতুনকে গত ১৫ মার্চ একটি দোকানের মধ্যে মারপিট করে নির্যাতন চালান স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ও তার সহযোগীরা। এ সংক্রান্ত একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করছে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যর পাশে থাকা কয়েক যুবক নির্যাতনে অংশ নেয়। নির্যাতিত ওই তরুণী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নির্যাতিত ইতি খাতুন জানান, গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যার পর পাশ্ববর্তী এনায়েতপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিল থেকে বন্ধু সাঈদের সাথে সাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কয়েকজন তাদের রাস্তায় গতিরোধ করে। এসময় তারা আমাকে দুশ্চরিত্র আখ্যা দিয়ে আটকে মারপিট করে। এতো মারছে যে আমি ঠিকমত হাঁটতে পারছি না। আমার সারা শরীরে কালচে দাগ পড়ে গেছে। ব্যাথা সহ্য হচ্ছে না।

ইতি আরো বলেন, আমাকে আনিচুর মেম্বার, আইয়ুব আলী, খোকন ও ভুট্টোসহ কয়েকজন মারপিট করে। তারা আমার কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। মারপিটের খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন এসে আমাকে ছাড়িয়ে আনে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে।

ইতির বন্ধু পাশ্ববর্তী বাগডাঙ্গা সরদার পাড়ার বাসিন্দা সাঈদ হোসেন বলেন, রাত হয়ে যাওয়ায় ইতি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলে। আমি তাকে সাইকেলে করে আব্দুলপুর গ্রামে নিয়ে যায়। এসময় পথে কয়েকজন তাদের গতিরোধ করে নাম পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পর তারা ইউপি মেম্বারকে ডেকে আনে। এরপর গ্রামের একটি দোকানে ঢুকিয়ে আমাদের মারপিট শুরু করে। ওরা ইতিকে অনেক মারপিট করে। আমাকেও মেরেছে। আমার কানে আঘাত লেগেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

ইতির মা নাজমা বেগম বলেন, বন্ধুর সাথে বাড়ি ফেরা কি এমন অপরাধ। তারাতো আমাদের ডেকে বলতে পারতো। কিন্তু কিভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। মেয়ের শরীর না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। ফেসবুকে আমার মেয়ের মারপিটের ভিডিও ছড়িয়ে গেছে। আমার মেয়ের সম্মান আর থাকলো না। আনিচুর মেম্বারের বউ এখন বলে বেড়াচ্ছে মেয়েটারে মেরে ফেললেই ভালো হতে।

আব্দুলপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, ইউপি মেম্বার আনিচুর রহমানের প্রভাবের কারণে গ্রামের পুরুষরা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি না। তবে স্থানীয় গৃহবধূরা জানান, অপরাধ করলেও এমন নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। আমরা মেয়েটির শরীর দেখেছি সারা শরীরে কালচে হয়ে গেছে। দুধ আলতা সুন্দর মেয়েটা মারপিটের কারণে একেবারে কালো হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দাউদ হোসেন বলেন, নির্যাতিত মেয়েটি, তার বাবা-মা সহ কয়েকজন আমার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিলো। আমি মেয়েটির কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। আমার জীবদ্দশায় আমি কখনো এমন নির্যাতন দেখেনি। যে পরিমাণ মেরেছে কোন সভ্য মানুষ এভাবে মারতে পারে না। যে কারণে আমি তাদের আইনের দারস্থ হতে পরামর্শ দিয়েছে। আমিও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক সেই প্রত্যাশা করি।

এদিকে শুক্রবার নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ইতির পিতা সাহেব আলী বাদী হয়ে ৪জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এরপর শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত তাসমীম জানান, মামলা পাওয়ার পর শুক্রবার সারারাত অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার সহযোগী ভুট্টো, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসানকে আটক করা হয়। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।