পাবিপ্রবির হলে নিয়ে বাসের সুপারভাইজারকে নির্যাতন!

পাবিপ্রবির  হলে নিয়ে বাসের সুপারভাইজারকে নির্যাতন!

পাবিপ্রবির হলে নিয়ে বাসের সুপারভাইজারকে নির্যাতন!

কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা থেকে পাবনাগামী বাসের সুপারভাইজারকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ফেলে দেয়া চেষ্টাও করেছে তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

বুধবার (২৩ মার্চ) ভোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত আব্দুল বারেক আসলাম পাবনার যাত্রীবাহী বাস এমএম ট্রাভেলসের সুপারভাইজার।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে এমএম ট্রাভেলস পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা  য়ে। বাসটি মাঝপথে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। বিরতির নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট অতিবাহিত হলে পাবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। পথে একাধিবার বাসের চালক- হেলপার ও সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান ওই শিক্ষার্থী। পরে ভোরে বাসটি পাবিপ্রবির প্রধান গেটের সামনে  পৌঁছুলে আগে থেকেই অবস্থান করা কিছু শিক্ষার্থী বাসে থেকে সুপারভাইজারকে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয় এবং তার কাছে থাকা টাকাও ছিনিয়ে  নেয়া হয়।

নির্যাতিত সুপারভাইজার আব্দুল বারেক আসলাম বলেন,‘হোটেলে ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় আমাকে গালাগাল করেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় আমি তাকে বুঝিয়ে বলি যে, বাসটি যেন ভোরে নিরাপদ সময়ে পাবনায় পৌঁছায় এ জন্য আমরা একটু সময় ধীরে ধীরে যাই। পথে বাসের লাইট জ্বালানোর জন্যও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। তখনও আমি তাকে বলি- এই সময়ে মহাসড়কে ডাকাতির সম্ভাবনা থাকে, তাই লাইট জ্বালানো থাকে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৮/১০ শিক্ষার্থী আমাকে তুলে নিয়ে হলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেঁধে হকিস্টিক দিয়ে মারধর করা হয়। হাতে-পায়ে খুর দিয়েও আঘাত করা হয়। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী হাত-পায়ের রগ কেটে পুকুরে ফেলে চেষ্টা করেও তারা। আমার কাছে থাকা বাসের ৪১ হাজার টাকাও জোর করে ছিনিয়ে নেন তারা।

এদিকে এঘটনা পাবনার পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্বদ্যিালয়ের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় মহাসড়কে যানচালাচল বন্ধ করে দেয়ায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পাবনা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এঘটনয়া আমাদের শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ। একজন শিক্ষার্থী একজন সুপারভাইজারকে তুচ্ছ ঘটনায় এভাবে নির্যাতন করে সেটা মেনে নেয়া যায় না। সন্ধ্যায় আমাদের সমস্ত পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আমাদের জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও উপস্থিত থাকবেন। যদি সেখানে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হয় তাহলে আগামীকাল থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে।’

এ ঘটনায় পাবিপ্রবির সেকশন অফিসার আসমা হক বলেন, ‘আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মারধরের ঘটনার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।