'আমি ছাত্রলীগ করি, সাংবাদিকতায় পড়ি, দেখে নিব' কুবি

'আমি ছাত্রলীগ করি, সাংবাদিকতায় পড়ি, দেখে নিব' কুবি

সমাজবিজ্ঞান শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকার

প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) এক সাংবাদিককে মারধর ও আরেকজনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকার। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার সাংবাদিককে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আরটিভি এবং বাংলাদেশের আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান মুরাদের সাথে দেখা করতে আসেন। এসময় রুম পরিষ্কার করছিলেন মেহেদী হাসান মুরাদ। রুম পরিষ্কারের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকার তিন তলায় পানি ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে মুরাদকে ও সাংবাদিক সমিতি নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। এসময় সমিতিকে দেখে নেওয়ার হুমকিও প্রদান করেন বিশ্বজিৎ। এসময় হাবিবুর রহমান এমন মন্তব্য কেন করছেন জানতে চাইলে মারধর শুরু করেন ও গালি দিতে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে মেহেদী হাসান মুরাদ কি হয়েছে জানতে চাইলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আসে বিশ্বজিৎ। এসময় চিৎকার করে তিনি বলেন, "এ হলে অস্ত্রের অভাব নেই, গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিব। আমি ছাত্রলীগ নেতা, সাংবাদিকতায় পড়ি। আমাকে কে কি করবে?" এসময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আহত সাংবাদিক হাবিবুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মারধরের শিকার হাবিবুর রহমান বলেন, আমি মুরাদ ভাই এর সাথে দেখা করতে ওনার রুমে যাই, সেসময় উনি রুম পরিষ্কারের পর বারন্দায় জমা পানি পরিষ্কার করছিলেন। আমিও ওনাকে সহযোগীতা এক করছিলাম একপর্যায়ে বিশ্বজিৎ ভাই এসে রাগারাগি করতে থাকেন। এসময় তিনি হুমকিসহ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করতে করতে মুরাদ ভাইকে মারতে উদ্ধত্য হন, এইসময় আমি ওনাকে এমন আচরণ কেন করছেন জানতে চাইলে উনি আমাকে অনবরত চর থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান মুরাদ বলেন, আমার রুম পরিষ্কার করছিলাম। ছেলেটিকে আমি চিনিও না। হুট করেই এসে সমিতিকে এবং আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হাবিব কারণ জানতে চাইলে তাকে মারধর করতে থাকে এবং গালাগাল দিতে থাকেন। পরে আমাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়। এছাড়া একটি অনলাইন পোর্টালে প্রক্টরিয়াল বডি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বজিৎ সরকার উলটো মারধরের অভিযোগ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী এবং হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল ইসলাম। প্রক্টর বলেন, অভিযোগ দেয়া হয়েছে এটা ভুল কথা। আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এটা বসে সমাধান করার বিষয়। এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এদিকে একটি পক্ষ জোরপূর্বক তাকে দিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন এবং তাকে মেডিকেলে ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি ঘটনার পর সাংবাদিকতা বিভাগের বিশ্বজিৎ কে নিয়ে বসেছিলাম। পরে আমি নামাজ পড়তে যাই। কিন্তু সে তার বিভাগের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে মেডিকেল এ গেছে। তবে আমার কাছে তাকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নেয়ার মতো মনে হয়নি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, দুপুরে এটার নিয়ে বিচারে বসেছিলাম। বিশ্বজিৎ কে দেখে তো হাসপাতালে নিতে হবে এমনটা মনে হয়নি। সাংবাদিক মারধর এবং হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সত্যতা পেলে বসে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পাইনি। মুখে শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নিবো।