মানবরচিত ধর্ম ও মতাদর্শের দুর্বলতা

মানবরচিত ধর্ম ও মতাদর্শের দুর্বলতা

ছবি: সংগৃহীত

মুফতি আতাউর রহমান   

পৃথিবীর মানবরচিত ধর্মগুলো বিশ্লেষণ করলে বহুমুখী দুর্বলতা চোখে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো মহান স্রষ্টা সম্পর্কে অমূলক ধারণা পোষণ করা এবং তাঁর সঙ্গে এমন সব বিষয় যুক্ত করা, তিনি যার বহু ঊর্ধ্বে ও অমুখাপেক্ষী। যেমন মহান স্রষ্টা আল্লাহর জন্য স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগী নির্ধারণ করা। তারা এসব করেছে মানবিক দুর্বলতা, প্রবৃত্তির তাড়না ও অমূলক ধারণা থেকে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া অপরকে শরিকরূপে ডাকে, তারা কিসের অনুসরণ করে? তারা তো শুধু অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং তারা শুধু মিথ্যাই বলে। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬৬)

পূর্বসূরিদের অন্ধ অনুকরণের কাছে তাদের বিবেক-বুদ্ধি ও সুস্থ চিন্তাগুলো পর্যন্ত হেরে যায়। মিথ্যা অহমিকার কারণে সত্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সে (ইবরাহিম) বলল, তোমরা নিজেরা যাদের খোদাই করে নির্মাণ করো তোমরা কি তাদেরই পূজা করো? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমরা যা তৈরি করো তাও। তারা বলল, তার জন্য এক ইমারত নির্মাণ কোরো। অতঃপর তাকে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কোরো। ’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ৯৫-৯৭)

কোনো প্রকার দলিল-প্রমাণ ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অবিচার। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাদের এই স্বজাতিরা আল্লাহর পরিবর্তে বহু উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এসব ইলাহ সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার অপেক্ষা অধিক অবিচারকারী আর কে?’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১৫)

কখনো কখনো আল্লাহ পার্থিব বিপদাপদ ও পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বিবেকের কালো পর্দা সরিয়ে দেন। তখন তারা নতমস্তকে আল্লাহকে প্রতিপালক ও ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘সমুদ্রে যখন তোমাদের বিপদ স্পর্শ করে, তখন শুধু তিনি ছাড়া আরো যাদের তোমরা আহ্বান করে থাকো তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়; অতঃপর তিনি যখন তোমাদের উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৬৭)

অবশ্য বর্তমান যুগের আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরাও কুফর-শিরকসহ অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে মানবরচিত ধর্মের স্তরে উপনীত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদিরা বলে, উজাইর আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে, মসিহ আল্লাহর পুত্র। তা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরি করেছিল তারা তাদের মতো কথা বলে। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। আর কোন দিকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আল্লাহ ছাড়া তাদের পণ্ডিতদের ও সংসার বিরাগীদের তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে এবং মারিয়ামের পুত্র মাসিহকেও। কিন্তু তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তারা যাকে শরিক করে তা থেকে তিনি কত পবিত্র। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩০-৩১)

আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া