হার না মানা দুই ভাইয়ের কথা

হার না মানা দুই ভাইয়ের কথা

বায়ে: জাকির হোসেন, ডানে জাহিদ হোসেন

আশরাফুল ইসলাম,(যশোর):

কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। যে ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করতে আগ্রহী না হয়ে আলস্যে দিন কাটায় এবং হতোদ্যম তাদের জীবনে সাফল্য প্রায় অসম্ভব।দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বা নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলেই ধরা দেয় একজন মানুষের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। কোন কাজে ব্যর্থ হলে তাতে হতাশ না হয়ে সেই কাজেই আরো কঠোর পরিশ্রম এবং মনোনিবেশ করলে সফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব।
কঠোর পরিশ্রমী দুই ভাইয়ের হার না মানা লড়াকু সংগ্রামের কথা বর্ণনা করলাম-
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খলিল নগর ইউনিয়নে মেধাবী ভ্রাতৃদ্বয় জাকির ও জাহিদ।
তারা (দুই ভাই) সংসারের অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন।পড়ালেখা করতে যেয়ে তাদের দু'ভাই এর সংগ্রাম করতে হয়েছে।টিউশনি করে চলতে হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, পিতা মোফাজ্জেল সরদার।দুই ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে যেয়ে তাকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলাতে হয়েছে।সংসারের অভাবের তাড়নায় তাঁকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল লাঙল-জোয়াল।সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা সংসার খরচ বাদে অবশিষ্ট টাকা বাইরে দুই ছেলের লেখাপড়ার জন্য পাঠাতে হতো।জাকির-জাহিদ দুই ভাই পিতার কষ্টের কথা ভেবে ভালোভাবে পড়ালেখা করতে থাকে।আর লক্ষ্য থাকে কীভাবে সরকারি চাকরি করে সংসারের অভাব মোচন করবে।
ছোটভাই অভাবের তাড়নায় লজিং মাস্টার থেকেও পড়ালেখা করেছে। দু'ভাই অনার্স -মাস্টার্স শেষ করে বেকার জীবন-যাপন করতে থাকে।এমতাবস্থায় আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী,নানাভাবে কটাক্ষ করতে থাকে।তবে সেদিকে তোয়াক্কা না করে সংগ্রামী মন নিয়ে চাকরির জন্য পড়ালেখা আরম্ভ করে।বড় ভাই সরকারি চাকরি লাভের আশায় অনেক চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১০/১৫ টা ভাইবায় অংশগ্রহণ করে কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বারবার ব্যর্থ হতে হয়।বড় ভাইয়ের এ ব্যর্থতা দেখে আত্মীয় স্বজন জাহিদকে বলে 'তুই কোন গার্মেন্টসে চলে যা,নতুবা তোর বড় ভাইয়ের মতো অবস্থা হবে।'এ কথা শুনে জাহিদের মনে জিদ চেপে বসে। ভাবতে থাকে যেভাবেই হোক চাকরি করতে হবে।একসময় ছোট ভাই(জাহিদ)বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে(বিপিএসসি)সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে ভাইবা দেয়।এদিকে বড় ভাই (জাকির)এর নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় চাকরি হয়।অন্যদিকে জাহিদ ও নিবন্ধনের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজে যথাক্রমে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক পদের জন্য মনোনীত হয়।তবে সরকারি হাইস্কুলে (নন-ক্যাডার) চাকরি হওয়ার কারণে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেননি।

বর্তমানে বড় ভাই তালা উপজেলার এইচ,এম শাহপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক(ইংরেজি) পদে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন।অন্যদিকে ছোট ভাই তালা উপজেলার 'শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে' সহকারী শিক্ষক(বাংলা) পদে একই মাসে তথা ৭  ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ যোগদান সম্পন্ন করেন।

দু-ভাইয়ের সরকারি চাকরি পাওয়ায় পিতা-মাতা,আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশিদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।জানতে চাইলে জাহিদ বলেন-আমরা দুই ভাই একসাথে চাকরি পাওয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজারও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে, যা আমাদের জন্য সহজ ছিল না।আমাদের পাশে থেকে যারা সহযোগীতা করেছেন তাদের ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারবো না।পরিশ্রম করলে অবশ্যই তার ফল পাওয়া যাবে,সৃষ্টিকর্তা কাউকে নিরাশ করেন না।সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন,যাতে  আমাদের দ্বারা সমাজের উপকার হয়।।তিনি আরও বলেন-"সফল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।সফলতা আর ব্যর্থতা হলো জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।সব ভুলে কঠিন পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।সততা,পরিশ্রম এবং একাগ্রতার মিলিত প্রয়াস- ই একটি মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।