রমজানে যাদের আমল কবুল হয়

রমজানে যাদের আমল কবুল হয়

রমজানে যাদের আমল কবুল হয়

রমজান মাসে আল্লাহ বান্দার আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহ বলেন, তবে রোজা ছাড়া। কেননা তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরস্কার দেব।

 (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৩)

এ জন্য রমজানে মুসলিমরা ইবাদত-বন্দেগিতে আরো বেশি মনোযোগী হয়। বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ইবাদত করার চেষ্টা করে। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে বহু মানুষের ইবাদত নিষ্ফল হয়ে যায়। নিম্নে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো। যদিও বিষয়গুলো রমজানে সঙ্গে বিশেষায়িত নয়, তবে রমজানে এসব বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকাটাই কাম্য।আল্লাহভীরুদের আমল : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের (ইবাদতই) গ্রহণ করেন। ’

(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭)

এ জন্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নিজেদের আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে সব সময় ভয়ে থাকতেন। ফাজালাহ ইবনে উবায়েদ (রা.) বলেন, যদি আমি জানতাম আমার এক অণু পরিমাণ আমল গ্রহণ করা হয়েছে, তবে তা আমার কাছে পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে প্রিয় হতো। কেননা আল্লাহ বলেছেন তিনি মুত্তাকিদের ইবাদত আমল গ্রহণ করেন। (আদ-দুরারুল মানসুর : ১/২৭৪)

শিরকমুক্ত আমল : আল্লাহ শিরকযুক্ত আমল গ্রহণ করেন না। আল্লাহর দরবারে শুধু শিরকমুক্ত আমলই গ্রহণ করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১১০)তাফসিরবিদরা শিরকমুক্ত আমলের ব্যাখ্যায় বলেন, যে ইবাদতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো প্রত্যাশা থাকে না।

লৌকিকতামুক্ত আমল : আল্লাহ লৌকিকতামুক্ত আমল কবুল করেন। কোনো আমলে লৌকিকতা থাকলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুনাম চায় আল্লাহ তাকে সুনাম দেন এবং যে ব্যক্তি লোক দেখাতে চায় আল্লাহ তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৮৬)

হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, সে হলো এমন ব্যক্তি গোপনে ভালো কাজ করে। অতঃপর সুনামের আশায় তা প্রকাশ করে। মানুষ তার প্রশংসা করে। এভাবে প্রদর্শনের কারণে তার কল্যাণ নষ্ট হয়ে যায়। একসময় মানুষ তার মনের ইচ্ছাটাও জানতে পারে যে, তার আমল নিষ্ঠাপূর্ণ ছিল না। (জামিউল উসুল : ১১/৭১৩)

দোয়াকারীর আমল : যারা আমল করার পর আল্লাহর কাছে তা কবুলের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাদের আমল কবুল করেন। নবী-রাসুল (আ.) থেকে শুরু করে পূর্বসূরি আলেমরা নিজেদের আমল কবুলের জন্য দোয়া করতেন। যেমন ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৭)

কোমল হৃদয় মানুষের আমল : আল্লাহ বিনম্র ও বিনয়ী মানুষের আমল কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হূদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী হয়। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৬০-৬১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, সে হলো এমন ব্যক্তি যে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে ও সদকা করে। অথচ সে ভয় পায় এগুলো কবুল করা হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৮)

দৃঢ়তার সঙ্গে করা আমল : যারা দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে আল্লাহ তাদের আমল কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো এবং তোমার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তারাও স্থির থাকুক; এবং সীমালঙ্ঘন কোরো না। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১২)

পবিত্র ব্যক্তির আমল : যারা দেহ ও মনে পবিত্র, আল্লাহ তাদের আমল গ্রহণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন। ’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)

যারা জেনে-বুঝে আমল করে : যারা জেনে-বুঝে সঠিক পদ্ধতিতে আমল করে আল্লাহর দরবারে তাদের আমল বেশি কবুল হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ছাড়া এটা কেউ পাবে না। ’

(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮০)

রমজানের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি : রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে দুই ব্যক্তির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক. যারা রমজানে তাদের পাপ মোচন করতে পারেনি, দুই. যে রোজাদারের রোজা বিফল হয়। মহানবী (সা.) রমজান মাসের রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত যেন অর্থহীন হয়ে না যায় এ জন্য সতর্ক করে বলেছেন, তোমাদের কেউ রোজা পালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের মতো আচরণ না করে।

কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করলে বা তাকে গালমন্দ করলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)। অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধূসরিত হোক যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

আল্লাহ আমাদেরকে ফলপ্রসূ রমজান দান করুন। আমিন।