ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মাঝে বিরল হেপাটাইটিসের প্রকোপ

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মাঝে বিরল হেপাটাইটিসের প্রকোপ

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মাঝে বিরল হেপাটাইটিসের প্রকোপ

ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক উইলিয়াম আর্ভিং বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় সপ্তাহে যেখানে দশটির বেশি হেপাটাইটিস রোগী পাওয়া যায় না, সেখানে গত সপ্তাহে সারা ইংল্যান্ডে মোট ৬০ জন এমন শিশু রোগী পাওয়া গেছে৷ হেপাটাইটিস রোগীর এমন সংখ্যা বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত করেছে তাকে৷দেখা গেছে, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের বয়স  পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে৷

লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেস্টেয়ার সাটক্লিফ মনে করেন, এত অল্প বয়সিদের মাঝে এই হারে হেপাটাইটিস ধরা পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের৷ রোগীদের দেহে যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে সেটি নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ একটু বেশি তার৷ তিনি জানান, রোগীদের দেহ পরীক্ষা করে এ, বি, সি, ডি বা ই, অর্থাৎ সাধারণ যেসব হেপাটাইটিসের ভাইরাস মানুষের দেহে পাওয়া যায় সেগুলোর একটাও পাওয়া যায়নি৷ বেশির ভাগ রোগীর দেহেই পাওয়া গেছে আডেনোভাইরাস ৪১৷

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রথমে ধরা পড়ে গত ১৯ এপ্রিল৷ তারপর একে একে স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং আয়ারল্যান্ডেও এমন রোগীর সন্ধান পায় ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল৷ কয়েকদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা থেকেও আসে এমন রোগী পাওয়ার খবর৷

অধ্যাপক আর্ভিং বলেন, হেপাটাইটিস সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এবং অ্যালকোহলের কোনো বিষাক্ত উপাদান বা শিশুর মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যাজনিত কারণে হয়ে থাকে৷কিন্তু গত কয়েকদিনে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় পাওয়া যাওয়া রোগীদের মধ্যে এমন এক ভাইরাস পাওয়া গেছে, যা বিস্মিত করেছে বিশেষজ্ঞদের৷হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুদের কারো কারো দেহে অ্যাডেনোভাইরাস ৪১=এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷

এমনিতে হেপাটাইটিস হলে যকৃতে সংক্রমণ হয়৷ এর ফলে ডাইরিয়া হতে পারে৷ কারো কারো বমিও হয় খুব৷তবে নতুন রোগীদের কারো কারো অবস্থা এমন সঙ্গীন হয়ে যাচ্ছে যে শেষ পর্যন্ত যকৃত প্রতিস্থাপন পর্যন্ত বিষয়টা গড়াচ্ছে৷

করোনার প্রভাব?

করোনা সংক্রমণের কারণে এমন হেপাটাইটিস দেখা দিলো কিনা তা জানার জন্যও চলছে গবেষণা৷ তবে এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ স্কটল্যান্ডে ১৩ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল৷ ১৩ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন করোনা পজিটিভ৷ বাকি ১০ জনের মধ্যে দুজনের কয়েক মাসের মধ্যে করোনা হয়েছিল৷ তবে বাকিদের মধ্যে পাঁচজনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়নি৷ তাদের কারো আগেও করোনা হয়নি৷

আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ওই ১৩ জনের একজনও আগে করোনা টিকা নেয়নি৷ তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা টিকার কারণে যে কারো এমন অদ্ভুতুড়ে হেপাটাইটিস হয়নি তা মোটামুটি ধরেই নেয়া যায়৷

ভয়াবহনয়

এ পর্যন্ত যাদের হেপাটাইটিস হয়েছে, তাদের মধ্যে সামান্য কয়েকজনের যকৃত প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়েছে৷তাই অধ্যাপক সাটক্লিফ মনে করেন, এখনও এই হেপাটাইটিস নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷ তিনি মনে করেন, করোনার কারণে শিশুরা দীর্ঘদিন ঘরে থাকায়, তাদের শরীর হয়ত আগের চেয়ে তাড়াতাড়ি ভাইরাসে কাবু হচ্ছে৷ যত দিন যাবে, ততই হয়ত পরিবেশের সঙ্গে আগের মতো খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করবে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার শিশুরা৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে