ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি চীনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে?

ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি চীনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে?

ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি চীনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে?

চীনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলোজিকে (এনইউডিটি) সহযোগিতা দিচ্ছেন ইউরোপীয় গবেষকরা৷ ডয়চে ভেলে ও তার সহযোগীদের এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷চীনের ‘সেনাবাহিনী এবং দেশকে শক্তিশালী করা' এনইউডিটির ঘোষিত উদ্দেশ্য৷

এনইউডিটির প্রাচরণামূলক এক ভিডিওতে দেখা যায় ট্যাংকের পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন চীনের সেনারা, চলছে বন্দুকের গোলাগুলি, আর সবশেষে ইউনিফর্ম পরা অধ্যাপকরা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন৷ নাটকীয় সংগীত আর নেপথ্য কণ্ঠে বলতে শুনা যায়, ‘‘জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়নে আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি৷''

এনইউডিটিতে পড়ুয়া চীনের এক শিক্ষার্থী পিএইচডি করেছেন জার্মানিতে৷ তার গবেষণা হয়ত সামরিক কাজে সহায়ক হওয়ার মতো ছিল৷ তবে এই শিক্ষার্থীর পিএইচডি তত্ত্বাবধান করা জার্মান অধ্যাপক সম্প্রতি বলেন, তিনি তার শিক্ষার্থীর সামরিক সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তেমন ভাবেননি৷ কণ্ঠে কিছুটা দুঃখবোধ নিয়ে তিনি বলেন, তার শিক্ষার্থী যথেষ্ট বন্ধুবৎসল এবং অসাধারণ ছিল৷ নিজ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার বিজ্ঞানে এমন শিক্ষার্থী পেয়ে তিনি গর্বিত বলেই জানান৷ তবে বৃত্তি শেষে তার ছাত্র চীনে ফিরে যাওয়াতে তিনি হতাশ হয়েছেন৷

চীনে ফিরে যাওয়ার পর ঐ শিক্ষার্থী এনইউডিটিতে চাকরি নেন৷ তার গবেষণার মূল বিষয় সম্পর্কে তেমন জানেন না জার্মান অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘‘এনইউডিটি এর সঙ্গে যুক্ত হলে আপনার কাজ সম্পর্কে বলার অনুমতি থাকে না৷’’

চীনের কমিউনিস্ট দলের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের অধীনে পরিচালিত হয় এনইউডিটি৷ দেশটির সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে গবেষণা করা আলেক্স জোসকে জানান, হাইপারসনিক ও পরমাণু অস্ত্র থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম সুপার কম্পিউটারসহ চীনের সামরিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই প্রতিষ্ঠান৷

তবে শুধু জার্মানি নয় গোটা ইউরোপের গবেষকদের সঙ্গেই এনইউডিটি এর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে৷

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে কোয়ান্টাম

ডাচ গণমাধ্যম ফলো দ্য মানি এবং এবং জার্মানির কারেক্টিভের নেতৃত্বে ডয়চে ভেলেসহ ১০টি ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম এই অনুসন্ধানটি চালিয়েছে৷ অনুসন্ধানে প্রায় তিন হাজার গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে যেগুলো ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে এনইউডিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা লিখেছেন৷

এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স থেকে থেকে শুরু করে কোয়ান্টামভিত্তিক নানা গবেষণা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আগামী দিনের পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে৷

বিশ্লেষকদের মতে বৈশ্বিক সুপারপাওয়ার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চীন তার গবেষকদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাঠাচ্ছে৷ জোসকে বলেন, ‘‘প্রকাশিত প্রতি দুইটি গবেষণার একটিতে দেখবেন এর পেছনে চীনের কোনো সামরিক কর্মকর্তা ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ বা পড়াশোনা করেছেন এবং সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন যার প্রেক্ষিতে এইসব গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে৷’’

ডয়চে ভেলে ও তার সহযোগীদের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এসব যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা চীনের সামরিক বাহিনীর হাতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷

অনুসন্ধানে হাতে আসা গবেষণাগুলোর মধ্যে অর্ধেক ক্ষেত্রে এনইউডিটির সঙ্গে কাজ করেছে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি৷ ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত এমন অন্তত ২৩০টি গবেষণা ছাপা হয়েছে৷ জার্মানিতে ইউনিভার্সিটি অব বন, ইউনিভার্সিটি অব স্টুটগার্ট এবং ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের মতো নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এইসব গবেষণায় যুক্ত ছিল৷

সূত্র:  ডয়চে ভেলে