এবার টিটিইকে গুলি করার হুমকি দিলেন এএসআই

এবার টিটিইকে গুলি করার হুমকি দিলেন এএসআই

এবার টিটিইকে গুলি করার হুমকি দিলেন এএসআই

এবার অন্য ট্রাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু, যিনি একটি চলন্ত ট্রেনে ডিউটিতে থাকাবস্থায় রেলওয়ে পুলিশের পরিদর্শক (এএসআই) রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে মাথার খুলি গুলি করে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (৩১ মে ) তারা খুলনা থেকে পাবনার ঈশ্বরদীগামী ঢাকাগামী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে ডিউটিতে ছিলেন। টিকিটবিহীন যাত্রীদের জরিমানা করাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়।  ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) এএসএম ইকবাল মাহবুব তাৎক্ষণিক টেলিগ্রামের মাধ্যমে ঘটনাটি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

রেলওয়ের বিভিন্ন  সূত্রে জানা গেছে, চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সিরাজগঞ্জ স্টেশনের উল্লাপাড়ায় গিয়ে  ট্রেনে ডিউটিতে থাকা টিটিই আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু টিকিট চেক করে বিনা টিকিট যাত্রীদের টিকিট দিচ্ছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ট্রেনের পরিচালক ইকবাল মাহবুব। এ সময় রেলওয়ে পুলিশের এক কনস্টেবল তাদের জিজ্ঞেস করেন, আপনারা এখানে আমাদের টিকিট  চেক করতে এসেছেন কেন? ইকবাল পুলিশ সদস্যকে শান্তভাবে কথা বলতে বলেন। এ সময় ঝগড়া শুরু হলে  ট্রেনে থাকা জিআরপি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক রুবেল মিয়া এগিয়ে যান।

 

টিটিই মিঠু এই প্রতিনিধিকে বলেন, "এএসআই রুবেল মিয়া ওই সময় উদ্ধত আচরণ করেন এবং একপর্যায়ে হাতকড়া(হ্যান্ডকাপ) দেখিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন এবং তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে গুলি করার হুমকি দেন।  ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশন ছাড়ার পর এসব ঘটনা ঘটে। জামতৈল স্টেশন পর্যন্ত বাকবিতন্ডা চলতে থাকে।" ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান ট্রেনের যাত্রী, গার্ড ও পরিচারকসহ আমি।”

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই রুবেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেনে টিকিট চেক করার সময় কনস্টেবল ফারুক ট্রেনের পরিচালক ইকবাল মাহবুবকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনি টিকিট ছাড়া যাত্রীদের রেখে এখানে কেন এসেছেন?' তর্কাতর্কি চলাকালে টিটিই মিঠু এসে আমাকে বকাঝকা করে বলেন, কোনো টাকা না পাওয়ায় পুলিশ এমন আচরণ করছে। এ প্রসঙ্গে আমি হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তারের কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।'

ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কুমার দাস বলেন, ট্রেনে পুলিশ ও টিটিই-রক্ষীদের মধ্যে ঝগড়া ও গালিগালাজ করতে শুনেছি। তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করে ঈশ্বরদীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। '

এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "আমাদের টিটিই অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ। ট্রেনের দায়িত্বরত এএসআই ট্রেনের আট যাত্রীকে জরিমানা করার চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে মারার হুমকি দেন।" আমি বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমি আমাদের  রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) কে এএসআইকে প্রত্যাহার করতে বলেছি।”

রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে বলেন,‘মঙ্গলবার রাতেই রেলওয়ের সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু হেনাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অপর দুই সদস্য হলেন-সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী ও একজন এএসপি। কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

পাকশী রেলওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) সাহাব উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান, "বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে  কোনো মারামারি বা হাতাহাতি হয়নি। শুনেছি ঝগড়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ঘটনার বিস্তারিত জানার পর বলতে পারব।"

উল্লেখ্য, ৫ মে, পাবনার ঈশ্বরদীর টিটিই শফিকুল ইসলামকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তিন যাত্রীর কাছ  থেকে জরিমানাসহ ভাড়া নেয়ায় চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তদন্তে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ৯ মে পুনরায় কর্মস্থলে যোগ দেন তিনি।