নারায়ণগঞ্জের ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের অভিযোগের পর নারীর আত্মহত্যা

নারায়ণগঞ্জের ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের অভিযোগের পর নারীর আত্মহত্যা

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার এক নারীর ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার অভিযোগের পর ঐ নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে এবং ঐ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার আব্দুল মোমেনকে গতকাল সোমবার গ্রেফতার করেছেন তারা।বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন "ভিডিও ধারণ করা, দেখানোর অভিযোগ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ঐ নারীর মা। ঐ মামলার সূত্র ধরে আব্দুল মোমেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর বাকিরা পলাতক আছে, যাদের মধ্যে রয়েছে মূল অভিযুক্তও। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।"

কী ঘটেছিল?

পুলিশ বলছে যিনি আত্মহত্যা করেছেন তিনি নিজেই জুনের ২ তারিখে একটা ধর্ষণের মামলা করেন।এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক এবং পুলিশের সূত্র বলছে মূল অভিযুক্ত ও ওই নারীর মধ্যে প্রায় দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।কিন্তু মেয়েটি যখন বিয়ের কথা বলে তখন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়।পরে মেয়েটি বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটা মামলা করেন।

ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন "চার/পাঁচদিন আগে ভিকটিম এবং তার মাকে মূল অভিযুক্তের বাসায় ডেকে আনা হয়। সেখানে স্থানীয় (ইউনিয়ন পরিষদ) মেম্বারসহ ওই অভিযুক্তের পরিবারের লোকজন ছিল। সেখানে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও দেখানো হয়। তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে করে তারা ঐ এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং মামলা তুলে নেয়।"এই ঘটনার পর গতকাল সোমবার ঐ নারী নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

সালিশ এবং ভিডিও ভাইরাল

পুলিশ বলছে এটা কোন সালিশ ছিল না।যে ব্যক্তি মূল অভিযুক্ত সে তার বাড়িতে ঐ নারী এবং তার মাকে ডাকে।মূলত তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য একটা চাপ তৈরি করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। "তবে যেহেতু মেয়েটি আগেই মামলা করেছে সেহেতু এখানে কোন সালিশের প্রশ্নই আসে না," বলেন মি. চন্দ্র সাহা।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলছেন "যদিও অভিযোগ হচ্ছে ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে, কিন্তু আমরা সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে দিয়ে দেখেছি, ভাইরাল বলতে যেটা বোঝায় সেটা হয়নি। আমরা অন্য একটা মাধ্যমে ভিডিও কালেক্ট করেছি।"মেয়েটি আত্মহত্যা করার পর মেয়েটির মা বাদী হয়ে আরেকটা মামলা করেছেন।

এদিকে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল আলম পাটোয়ারী বলেন, ভিডিও এবং ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে মেয়েটি বিভিন্ন সময় নিজেই ভিডিওগুলো ধারণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন।মি. পাটোয়ারী বলেন "তাদের এক সঙ্গে কোন ভিডিও আমরা পাইনি। এছাড়া এই ভিডিও অন্য কারো কাছে আছে কিনা সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি, যদি থাকে তাহলে তাকেও আমরা আটক করবো।"

মি. পাটোয়ারী বলেন মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি সৌদি আরবে থাকতেন এবং মেয়েটি থাকতেন ওমানে।বন্দর উপজেলায় তারা ছিলেন প্রতিবেশী। সেই সূত্রে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি রমজান মাসের আগে দেশে ফিরে আসেন।আর মেয়েটি সাত মাস আগে দেশে ফিরে আসেন।

পুলিশ বলছে, যখন এই ভিডিওগুলো কয়েকজনকে দেখানো হয় এবং ভিকটিম পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় তখন মেয়েটি আত্মহত্যা করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে।অভিযুক্ত ব্যক্তিটি দেশের বাইরে চলে যেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে।পুলিশ বলছে তিনি যেহেতু সৌদি আরবে থাকতেন তাই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।পুলিশ আরো জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিটির মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান ঢাকা বিমানবন্দর দেখা গেছে।

সূত্র  : বিবিসি