ব্যাংক ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশ হচ্ছে

ব্যাংক ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশ হচ্ছে

ফাইল ফটো

নতুন বছরের (২০২০ সাল) এপ্রিল মাস থেকে ব্যাংক আমানতে ৬ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্র আ হ ম মোস্তফা কামাল। সোমবার রাতে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এবং এমডিদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। রাজধানীর গুলশানে বিএবির কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সকল প্রকার ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হবে।

এর আগে ১লা ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, শিগগিরই শিল্প ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। একই দিন রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিভাবে দেশের উৎপাদনশীল খাতের ঋণের সুদহার কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেন তারা। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ২৬শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্ষদ সভায় শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় বিষয়টি কার্যকরের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালে ১লা জানুয়ারি  থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পরিবর্তন করা হয়েছে সিদ্ধান্ত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ চার মাসে লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১৬১ কোটি ইউএস ডলার। এ সময়ে লক্ষ্য ছিলো প্রায় ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। এজন্য ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন হলে এ খাতে স্বস্তি আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘাঁটলে সে সত্যতা মেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.০৪ শতাংশ। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ১০.৬৬ শতাংশ। আগস্টে তা ছিলো ১০.৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই  শেষে ছিলো ১১.২৬ শতাংশ। জুনে ঋণপ্রবাহ ছিলো ১১.২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিলো ১২.১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিলো ১২.০৭ শতাংশ, মার্চে এ প্রবাহ ছিলো ১২.৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ১২.৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩.২০ শতাংশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেখানে ১২, ১৩ কিংবা ১৫, ১৬ শতংশ সুদহার নিয়েছে, সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদহার অনেক আগে থেকেই এক অঙ্কের।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮ সালে বিশ্বের তৃতীয় দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার গড়ে ১২.৫ শতাংশ। একই সময়ে সুইজারল্যান্ডে ২.৬ শতাংশ, ইতালিতে ২.৭ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৪.১ শতাংশ, চীনে ৪.৩ শতাংশ, কুয়েতে ৪.৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৪.৯ শতাংশ এবং ভারতে ৯.৫ শতাংশ ছিলো ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার।