খাদ থেকে উদ্ধারে শ্রীলঙ্কায় আইএমএফ প্রতিনিধিরা

খাদ থেকে উদ্ধারে শ্রীলঙ্কায় আইএমএফ প্রতিনিধিরা

খাদ থেকে উদ্ধারে শ্রীলঙ্কায় আইএমএফ প্রতিনিধিরা

চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে শ্রীলঙ্কাকে টেনে তুলতে ‘উদ্ধার প্রকল্প' বিষয়ে আলোচনার জন্য শ্রীলঙ্কায় এসেছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল৷ এর মধ্যে দেশটিতে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি৷ প্রয়োজন জরুরি ত্রাণ তহবিলও৷

একের পর এক ভুল নীতি, কোভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ মিলিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা৷ দুই কোটি ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশটি গত এপ্রিলেই জানিয়ে দিয়েছে এই মুহূর্তে তার পক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়৷ এদিকে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, আকাশচুম্বি মূল্যস্ফীতি, দেখা দিয়েছে খাদ্য ও ঔষধের চরম ঘাটতি৷ এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে জাতিসংঘ৷

এই অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কাকে টেনে তুলতে সম্ভাব্য ‘উদ্ধার প্রকল্পের' রূপরেখা ঠিক করতে সোমবার দেশটিতে এসেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা৷ সেটি কেমন হবে, কী ধরনের শর্ত থাকবে আগামী ১০ দিন ধরে চলবে সেই আলোচনা৷ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘‘আইএমএফের নীতি অনুযায়ী এই কঠিন সময়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমরা পুনঃনিশ্চিত করছি৷''

কলম্বোর আশা এই সফরের মধ্য দিয়ে ঋণ পুনর্গঠন, পর্যালোচনা এবং জরুরি ভিত্তিতে আইএমএফ পর্ষদ দেশটির জন্য অর্থ ছাড় করবে৷ কিন্তু সাধারণত এই ধরনের আলোচনার সুরাহা হতে মাসের পর মাস সময় লাগে৷ যদি তাই হয় তাহলে পণ্যের ঘাটতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়বে দেশটি৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেলিমার এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ প্যাট্রিক কারেন জানান, কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তি হলেও চূড়ান্ত প্রকল্পে পৌঁছানোর জন্য শ্রীলঙ্কা এখন যেসব দেশ বা যাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে তাদেরকে পর্যাপ্ত ছাড় দেয়ার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷ আর ঋণ পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট দীর্ঘ বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান তিনি৷

বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে চীন, ভারতসহ নানা দেশ, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বন্ড মার্কেট থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকার৷ আইএমএফ-এর কাছ থেকে ‘উদ্ধার তহবিল' পাওয়ার জন্য আলোচনায় দেশটির আগের এসব ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে৷ বিশেষ করে বন্ড বা ঋণপত্রের ক্রেতারা চান আলোচনায় তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি যাতে গুরুত্ব পায়৷ বার্লিন ভিত্তিক কাপিটুলুম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজোর লুৎস রোয়েহমেয়ার বলেন, ‘‘অনেক আন্তর্জাতিক বন্ডহোল্ডারদের মূল চাহিদা তারা যাতে আলোচনায় অংশ নেয় এবং ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়টি যাতে সবার উপরে থাকে৷''     

কিন্তু মুশকিলের বিষয় হলো শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ এরইমধ্যে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন৷ জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, ঔষধের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা৷ মোহাম্মদ রহমান নামে ৬৪ বছর বয়সি এক অটোরিক্সাচালক গ্যাসের জন্য ১৬ ঘণ্টা ধরে একটি স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ভয়াবহ৷ আয়-রোজগার নেই, বাড়ি যেতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না৷''

সূত্র  : ডয়চে ভেলে