পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ

পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ

পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ

 

পবিত্র কাবাঘর! মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন। যে ঘরের সাথে মিশে আছে মুসলমানদের আবেগ, ভালোবাসা! সে ঘরকে জীবনে একটিবারের জন্য হলেও দেখার আকাঙ্খামেটাতে মুসলমানরা ছুটে যায়। যে ঘরে হজের মৌসুমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত হন লাখো হাজী। ওমরাহ করতে যান লাখো মুসল্লি।

বিশুদ্ধ মতে, এই ঘরকে চারবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া সর্বপ্রথম কে নির্মাণ করেন এ নিয়ে রয়েছে মতানৈক্য। অনেকের মতে, এই ঘর সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন হজরত আদম আ:। অনেকের মতে, হজরত শীস আ: এই ঘর নির্মাণ করেন। তবে চারবার পুনর্নির্মাণ করা হয় এটি সুস্পষ্ট।

প্রথমবার : প্রথমবারের মতো নির্মাণ কিংবা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইবরাহিম আ:। আল্লাহ তায়ালা নবী সা:কে লক্ষ করে বলেন, ‘স্মরণ করুন, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিল’ (সূরা বাকারা-১২৭)।

যখন ইবরাহিম আ:-এর ওপর কাবাঘর নির্মাণের হুকুম এলো, পুত্র ইসমাইল আ:-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেন। ইসমাইল আ: খুশিমনে বাবার কাজে সহযোগিতা করেন। ইসমাইল আ: ছিলেন একজন আনুগত্যশীল সন্তান। ইবরাহিম আ:-এর কোরবানির কথা আমাদের সবারই জানা।

দ্বিতীয়বার : রাসূল সা:-এর নবুয়তের আগে মক্কার কুরাইশরা পুনরায় নির্মাণ করেন। নবীজী স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং কাবাঘর নির্মাণে ও হাজরে আসওয়াদ বসানোতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তবে আগের চেয়ে কিছু অংশ কমিয়ে আনা হয়। এ ব্যাপারে আয়েশা রা: জিজ্ঞেস করলে নবীজী বলেন, ‘হে আয়েশা! যদি তোমার সম্প্রদায় জাহেলি যুগের নিকটবর্তী না হতো, তা হলে বায়তুল্লাহ (কাবা) সম্পর্কে আমি আদেশ করতাম ও তা (সাবেক নির্মাণ কাঠামো) ভেঙে দেয়া হতো এবং তা থেকে যা বাদ দেয়া হয়েছে, আমি তা পুনঃস্থাপন করতাম। তাকে ভূমির সাথে মিলাতাম (মেঝে নিচু করতাম)। আর তার দুটি দরজা করতাম; একটি পূর্ব দিকের দরজা আর অপরটি পশ্চিম দিকের দরজা। তারা এর সঠিক নির্মাণে অসমর্থ হয়েছে। আমি তাকে ইবরাহিম আ:-এর নির্মাণ কাঠামোর ওপর বসাতাম (নাসায়ি-২৯০৩)।

তৃতীয়বার : ইয়াজিদের শাসনামলে ইবনুজ জুবাইর কাবাঘরটি ফের নির্মাণ করেন। ৩৬ হিজরির শেষের দিকে ইয়াজিদের আদেশে হুসাইন ইবনু নামির আস-সাকুনির নেতৃত্বে ইবনুজ জুবাইরের বিরুদ্ধে লড়াই হয়। কাবাঘরের সীমানায় মিনজানিক নিক্ষেপ করার ফলে কাবাঘরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। লড়াই শেষে ইবনুজ জুবাইর হজের মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন।
হজের মৌসুমে মানুষ সমবেত হলে সবার থেকে পরামর্শ নেন, নতুন করে সংস্কার করবেন নাকি এই অবস্থায় সংস্কার করবেন? ইবনে আব্বাস রা: রাসূলের যুগে যেভাবে ছিল সেভাবে পুনর্নির্মাণ করার পরামর্শ দেন। ইবনুজ জুবাইর চেয়েছিলেন নতুন করে সংস্কার করতে। ইবনুজ জুবাইর তিনবার ইস্তিখারা করেন। প্রতিবারই তার মন নতুন সংস্করণের দিকে সায় দেয়। ফলে তিনি নতুন করে সংস্কার করেন। মক্কার মুশরিকরা যে অংশ কমিয়েছিল সেটাও যোগ করেন। এখানে আয়েশা রা:-এর হাদিসকে অনুসরণ করে এমনটি করেন।
চতুর্থবার : ইবনুজ জুবাইরের মৃত্যুর পর হাজ্জাজ আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেন যে, কাবাঘরকে নবীজীর যুগে যেমন ছিল সেভাবে পুনর্নির্মাণ করবেন। তার অনুমতিক্রমে হাজ্জাজ কাবাঘরকে ফের সংস্কার করেন।

খলিফা হারুন অর রশিদের শাসনামলে তিনি এটিকে ইবরাহিম আ:-এর মতো করে পুনর্নির্মাণ করার দৃঢ়সঙ্কল্প করেন। প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু মালিক ইবনে আনাস রা: এতে নিষেধ করেন। বলেন, আপনি এই পবিত্র ঘরকে পরবর্তী খলিফাদের জন্য খেলার বস্তু বানিয়েন না। এই ঘরের প্রতি মুসলমানদের যে সম্মান, ভয়-ভীতি তা দূর করে দিয়েন না। আপনি এই ঘরকে এভাবেই রেখে দিন। তার এই কথায় খলিফা হারুন অর রশিদ পুনর্নির্মাণ করেননি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার