খাশোগি হত্যা : কী আলোচনা হয়েছিল যুবরাজ সালমান ও বাইডেনের মধ্যে

খাশোগি হত্যা : কী আলোচনা হয়েছিল যুবরাজ সালমান ও বাইডেনের মধ্যে

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে বলেছেন।

বাইডেন এবং যুবরাজের মধ্যে কথোপকথন সম্পর্কে জেদ্দায় এক সংবাদ সম্মেলনে আরব নিউজের প্রশ্নের জবাবে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফলসাল বিন ফারহান এ কথা বলেন।

সৌদি সাংবাদিক ও লেখক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য বলে বর্ণনা করেছেন বাইডেন।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ক্রাউন প্রিন্স খাশোগির বিষয়ে বাইডেনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে ‘এ অপরাধটি দুর্ভাগ্যজনক এবং ঘৃণ্য হলেও রাজ্যটি খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করেছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রাউন প্রিন্স বাইডেনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো দেশেই এমন ভুলগুলো হয়।’

যুবরাজ ফারহানের মতে, ক্রাউন প্রিন্স উল্লেখ করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ভুল করেছে এবং ‘দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে ভুলগুলো সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সৌদি আরব একটি দায়িত্বশীল দেশের মতো আচরণ করেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’

ক্রাউন প্রিন্স ইরাকের আবু গারিব কারাগারে আমেরিকার বাড়াবাড়ি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও উল্লেখ্য করেন। এছাড়া আফগানিস্তানে ২০২১ সালের ড্রোন হামলার কথাও উল্লেখ করেন, যার ফলে একটি পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে এই ঘটনার জন্য নিজেদের দায়বদ্ধ রাখে এবং সৌদি আরবও ঠিক একই কাজ করেছে।

ক্রাউন প্রিন্স এবং বাইডেনের মধ্যে ঠিক কী ঘটেছিল তার বিশদ বিবরণ দিয়ে প্রিন্স ফারহান বলেন, এ সময় দেশ দুটির মূল্যবোধ সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছিল।

বাইডেনের দিকে ইঙ্গিত করে যুবরাজ সালমান বলেছিলেন যে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ‘আমাদের ইসলামিক বিশ্বাস এবং আরব ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে রাজ্যের মূলনীতি ও মূল্যবোধ।’

প্রিন্স ফারহান বলেন, ক্রাউন প্রিন্স মার্কিন নেতাকে বলেছিলেন যে ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সংলাপের মাধ্যমে মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়া উচিত। আপনার মূল্যবোধ অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা কার্যকর হবে না। এটি আপনাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেবে। আপনার মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়ার সঠিক উপায় হলো, বিশ্বকে দেখানো যে আপনি প্রথম সেগুলো মেনে চলেন।

‘এবং তারপরে যদি আপনার মূল্যবোধগুলো বৈধ এবং বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তবে সেগুলো গ্রহণ করা হবে। আপনি জোর করে আপনার মূল্যবোধ চাপিয়ে দিতে পারবেন না এবং আপনাকে সেটা বুঝতে হবে।’

‘ক্রাউন প্রিন্স বাইডেনকে বেশ স্পষ্ট করে বলেছেন যে, শেষ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ রয়েছে। এই মূল্যবোধগুলো মার্কিন মূল্যবোধের সাথে শতভাগ মিলবে না কারণ আমরা আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, নিজস্ব মূল্যবোধ, নিজস্ব বিশ্বাসের জন্য খুব, খুব বেশি গর্বিত। প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব ব্যবস্থা, নিজস্ব মূল্যবোধ রক্ষা করতে চায়।’

যুবরাজ ফারহান ক্রাউন প্রিন্সকে উদ্ধৃত করে বলেছেন যে ‘আমরা আমাদের দেশ এবং আমাদের মূল্যবোধের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। এবং যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবলমাত্র তার মতো দেশগুলোর সাথে মোকাবিলা করতে চায় তবে দেশগুলোর তালিকা খুব ছোট হতে চলেছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, বাইডেনকে বলা হয়েছে যে ‘আমাদের একসাথে কাজ করার একমাত্র উপায় হলো যদি আমরা একে অপরকে সম্মান করি এবং একে অপরের মূল্যবোধ এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে।’

সূত্র : আরব নিউজ