স্টোকসের ওয়ানডে থেকে অবসরে আন্তর্জাতিক সূচি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে

স্টোকসের ওয়ানডে থেকে অবসরে আন্তর্জাতিক সূচি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে

বেন স্টোকস

এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সময় ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বেন স্টোকস কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন,‘ আমরা গাড়ি নই, যে পেট্রোল দিলেই চলবো’।  

এই সময় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচিকে ‘অস্থির’ এবং শারীরিক ও মানসিক ধকল কাটাতে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে উল্লেখ করলেও ম্যাচ সুচি সংস্কারের সম্ভবনা কম। ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) স্কাই টিভির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আলোকে আন্তর্জাতিক সুচির সম্প্রচার থেকেই আয় করে বছরে ২২৯ মিলিয়ন পাউন্ড। শুধু ইংল্যান্ড নয়, এই খেলার বেশীরভাগ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে এই সুচি।   

২০১৭ সালের শুরু থেকে ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, যা তাদেরকে ভারেতর চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের ম্যাচ সংখ্যা ৪৭২।

তবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে স্থগিত  ম্যাচগুলোও  এই বছরের নতুন সুচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিজের হোম গ্রাউন্ড ডারহামে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইংল্যান্ড পরাজিত হবার পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন স্টোকস।  ম্যাচে ৩১ বছর বয়সি এই অল রাউন্ড ৪৪ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি। ব্যাট হাতে সংগ্রহ করেছেন মাত্র ৫ রান।

ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি  ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন স্টোকস। চলতি মাসে ২৫ দিনের মধ্যে ১২টি ম্যাচের সুচি রয়েছে তাদের। এছাড়া ২০২২ সালের ঘরোয়া মৌসুমে সাতটি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ডের টেস্ট দল।
সর্বশেষ  ম্যাচটি খেলতে নামার আগে স্টোকস বিবিসি’কে বলেন,‘ সকলেই সর্বোচ্চ মানের পন্য চায়। আপনি চান, সেরা খেলোয়াড়রা যতটা সম্ভব সবসময় খেলুক। কিন্তু আমরা গাড়ি নই যে, পেট্রোল দিলেই চলতে থাকবো।’

ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক জশ বাটলার সতীর্থের  এই অবসর গ্রহনের ঘটনাকে ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছে যে অন্য ফর্মেটে লোভনীয় অর্থের দাপটে শেষ পর্যন্ত ছিটকে যাবে ওয়ানডে ক্রিকেট।
তারপরও চুড়ান্ত হয়ে আছে ২০২৩, ২০২৭ ও ২০৩১ সালের ৫০ ওভারের বিশ^কাপ। সেই সঙ্গে ২০২৫ ও ২০২৯ সালে নির্ধারিত হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সুচি। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ।    

ইতোমধ্যে ঘরোয়া টি-২০ সিরিজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আগামী জানুয়ারির পূর্ব নির্ধারিত সিরিজ থেকে সরে এসেছে দক্ষিন আফ্রিকা। অথচ এই কারণে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ^কাপে অংশগ্রহণ নিয়ে ঝুঁকিতে থাকতে হবে প্রোটিয়াদের।

আগের দিনে ক্রিকেটাররা এক সঙ্গে সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসর নিতেন। কিন্তু বর্তমানে স্টোকসের মতো এই ধরনের অবসর গ্রহণের ঘটনা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আইপিএল ও অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ প্রতিযোগিতার কারণে এখন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা আয়ের জন্য জাতীয় দলের হয়ে খেলার উপর নির্ভরশীল নয়।

ইংল্যান্ডের সর্বকালের শীর্ষ টেস্ট উইকেট সংগ্রহকারী দুই কৃতি ক্রিকেটার জেমস এন্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড অনেক আগেই সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। যাতে টেস্ট ক্যারিয়ারকে আরো প্রলম্বিত করা যায়। অপরদিকে তারকা ব্যাটসম্যান জো রুট দীর্ঘদিন ধরেই কোন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি  খেলছেন না।

এদিকে ২০১৯ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও সব ফর্মেটের ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টোকসের ওয়ানডে অবসর প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক রুট বলেন,‘ আপনি পন্যের মান কমাতে চান না। আপনি বার বার চাইছেন সেরা থেকে আরো সেরা পন্য নিতে।’

তারপরও লাভজনক সুচি কমাতে অনীহা দেখাচ্ছেন কর্তারা। উদাহারন হিসেবে বলা যায়, ইংল্যান্ড ১৮ সদস্যের একটি স্কোয়াড গঠন করেছিল যে দলের ৯ জন খেলোয়াড়েরই এর আগে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না।
 ইংল্যান্ডে সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্টোকস ও অন্য শীর্ষ তারকাদের অনুপস্থিতিতে দর্শকরা কি দূরে চলে যাবেন? আর কর্মকর্তরা কি অনুপস্থিতি কমানোর জন্য কাজের চাপ কমাবেন?

পরিবর্তনের পথ আদৌ আছে কিনা  তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল আথারটন। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের মনোযোগ শুধু আরো বেশী ক্রিকেট আয়োজনের মাধ্যমে বেশী অর্থ আয় করার দিকে। তিনি টাইমসে লিখেছেন,‘ উদ্বিগ্ন হবেন না। বিশ^কাপের এক বছর আগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে স্টোকসের এই অবসর গ্রহন তাদের জন্য পুনর্বিবেচনার একটি অংশও হতে পারে।

সূত্র: বাসস