নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও-নাজির

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও-নাজির

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও-নাজির

আদালতের জারিকারকের সাথে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেয়ার ঘটনায় বোয়ালমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নাজিরের নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে তাদের আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদেশ প্রদানকালে আদালত বলেন, ইউএনও যেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনি এটি সেখানেই শেষ করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। এদিকে উকিল মিয়াকে আদালতের আদেশের বিষয়ে আরো যত্নশীল ও সতর্ক থাকার কথা বলেছেন হাইকোর্ট।

এর আগে আদালতের জারিকারকের সাথে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেয়ার অভিযোগে গত ৭ জুন ইউএনও মো.: রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না-তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। পরে ২১ জুন ইউএনও এবং নাজির হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন।

আদালতে ইউএনও রেজাউল করিমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক এবং নাজিরের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো: মোজাম্মেল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানান, ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ওই দুর্ব্যবহারের ঘটনা লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে জানানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অবমাননার রুলসহ ওই আদেশ দেন। তারা হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রথানা করেন। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করে তাদেরতে আদালত অবমানার অভিযোগ থেকে অব্যহতি দিয়েছেন।

বোয়ালমারীর আদালত থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত অবহিতকরণপত্র থেকে জানানো হয়, গত ২৭ এপ্রিল বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানি মামলার নোটিশ জারি করতে জারিকারক মো: কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে নাজির উকিল মিয়ার কাছে নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ জানালে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে তাদের অপেক্ষায় রাখেন। বিকেল ৪টার দিকে তারা আবারো নাজিরের কাছে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপরের তলায় গিয়ে বসতে বলেন।

অন্য জায়গায় সমন জারির কাজ আছে জানালে উকিল মিয়া বলেন, তাতে তার কী, জজকোর্টের নোটিশ না রাখলে তার কী হবে? তিনি এর চেয়ে বড় কাজে ব্যস্ত আছেন। তিনি নোটিশ পাশের টেবিলে দিতে বললে পাশের টেবিলে দায়িত্বরত কর্মচারী নোটিশ বুঝে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জারিকারক বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবে বললে জানালে উকিল মিয়া বলেন, ‘জজের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা নির্বাহী বিভাগের লোক। নোটিশ না রাখলে আমাদের কিছুই হবে না।’

একপর্যায়ে নোটিশ বুঝে নেন উকিল মিয়া। এরই মধ্যে ওই অফিসের একজন কর্মচারী বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি জারিকারক দুজনকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকিয়ে জেরা করতে থাকেন।

স্টাফদের সাথে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জারিকারকদের সাজা দেয়ার হুমকি দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও তাদের মোবাইল কেড়ে নেন ও মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে বলেন।

তারা রোজা আছেন জানালে ইউএনও বলেন, মুচলেকা ব্যতীত তাদের ছাড়বেন না তিনি। একপর্যায়ে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন ইউএনও। এরপর জোর করে নির্দেশনামতে মুচলেকা লিখিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

সূত্র : ইউএনবি