লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য ধরে কাজ করবে ঢাকা ও বেইজিং : মোমেন

লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য ধরে কাজ করবে ঢাকা ও বেইজিং : মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

একটি দেশের আরো অগ্রগতির জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও চীন সব ধরনের ‘উস্কানি ও বাধা’ উপেক্ষা করে তাদের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সফরকে ‘রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

চীনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সবসময় পাশে থাকবে এবং বিদ্যমান সুসম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই), বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বা নতুন চীনা ঋণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

চীনের স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাতের আগে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ জিডিআই সংক্রান্ত প্রস্তাবটি আরো পর্যালোচনা করবে। কারণ অংশীদার দেশগুলো থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব আসছে। বাংলাদেশ পক্ষ সময়মত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য চীনা পক্ষের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেছে।

মোমেন বলেন, দু‘পক্ষ দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর উপায় নিয়েও আলোচনা করেছে এবং চীন সেপ্টেম্বর থেকে চীনা বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশের আরো পণ্য যুক্ত করতে সম্মত হয়েছে।

এর আগে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের ইতোমধ্যে চীনে রফতানিকৃত ৯৮ শতাংশ আইটেমের জন্য শুল্কমুক্ত অ্যাক্সেস রয়েছে।

একটি পৃথক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘বাকি দু’শতাংশ পণ্য... গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। এখন তারা ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরো এক শতাংশ অফার করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর। কারণ রফতানির ওপর ভিত্তি করে আমাদের একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি রয়েছে।’

শাহরিয়ার বলেন, নতুন করের সুবিধার মধ্যে পোশাক, হস্তশিল্প ও অন্যান্য পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; কিছুদিন আগে যেগুলো কিছু বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই চীনের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে এমন পণ্য ও সেবার তালিকা পাবে।

মোমেন জানান, চীনা পক্ষ অবিলম্বে সেদেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে। বর্তমানে, চীনে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানকার ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

শাহরিয়ার বলেন, দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও চীন চারটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

স্বাক্ষরিত নথিগুলো হলো- চীনের সহায়তায় অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পের স্বীকৃতি ও হস্তান্তরপত্র, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও হ্রাসের বিশেষ সহায়তার পরিকল্পনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ২০২৩ থেকে ২০২৭ সময়কালের জন্য সাংস্কৃতিক ও পর্যটন বিনিময় কর্মসূচি এবং সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মধ্যে প্রথম সমঝোতা স্মারক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দেখে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুশি।

বৈঠকের সময় উভয় পক্ষই, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ‘নতুন স্তরে’ উন্নীত করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে।

মন্ত্রী ওয়াং ভবিষ্যতে যৌথ সহযোগিতার ওপর জোর দেন এবং ‘এক-চীন’ নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন।

রোবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়াংকে বিদায় জানান মোমেন। প্রায় ১৮ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর শেষ করে তিনি মঙ্গোলিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।

সূত্র : ইউএনবি