“পুলিশের চাকরি মানে ব্লেডের উপর দিয়ে হাটা”

“পুলিশের চাকরি মানে ব্লেডের উপর দিয়ে হাটা”

“পুলিশের চাকরি মানে ব্লেডের উপর দিয়ে হাটা”

শুধু পাবনাবাসীকে নয় তার সহকর্মীদেরকে কাঁদিয়ে পাবনা থেকে বিদায় নিলেন পাবনার পুলিশ সুপার (অতিরিক্তি ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

ফুল সজ্জিত গাড়িতে রশি টেনে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এসপির সহধর্মীনি শাহরিনা জাহানকেও বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে ফুলের রশি বেঁধে পুলিশ লাইনস মাঠে বিদায় জানানো হয়। এর আগে বেলা ১১টায় পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জাঁকজমকপূর্ণ বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

বিদায়ী পুলিশ সুপারকে তার সততা, নিষ্ঠা, আলোবাসা, সামাজিক কর্মকান্ডসহ পেশাগত কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন বক্তারা। এসপি স্যার আমাদের সঙ্গে দেড় বছর সময় কাটিয়েছেন, তার কর্মদক্ষতা ও মানবিক কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে। স্যার সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। কর্মজীবনে একজন এসপি তার সহকর্মীদের এত স্নেহ ও ভালোবাসা দিতে পারেন সেটা অন্য এসপির সময় পাইনি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশী সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি সদাচারণ করতেন। অনুষ্ঠানে জেলা পুুলিশের পক্ষ থেকে তাকে মানপত্র, ফুলের  তোড়াসহ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক।  সেটা আমি কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। জনগণ পুলিশের কাছে সেবা না পেলে আস্থার জায়গাটা আর থাকে না। যতদিন পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করবেন মনে করবেন এটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। একজন পুলিশ সদস্যর জন্য পুরো পুলিশের বদনাম হবে এমন কোনো কাজ করবেন না। পুলিশের চাকরি মানে বেল্ডের ওপর দিয়ে হাঁটা, একটু ফসকে গেলেই রক্তাক্ত হবে এটা মনে রাখতে হবে। থানায় কোনো মানুষকে হয়রানি করবেন না। সবার সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করতে হবে। সেবা নিতে আসা সবার ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শ দেবেন।

তিনি বলেন, পাবনাবাসীর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। সারাজীবন পাবনার মানুষের এই ভালোবাসা মনে রাখব। আমার ১৮ বছরের কর্মজীবনে এমন সুন্দর মুহূর্ত কখনো কাটেনি। যোগদানের প্রথমদিনে সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে বলেছিলাম পুলিশ হবে জনগণের প্রথম ভরসাস্থল। পাবনায় থাকার শেষদিন পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি।

“মাদকের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আপসহীন এই পুলিশ সুপার আবেগপ্রবণ হয়ে অশ্রুসিক্ত

অবস্থায় পাবনাবাসীকে কাঁদিয়ে বলে গেলেন যতটুকু দিয়ে গেলাম ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। আপনারা ভালো থাকুন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।” 

এসময় উপস্থিত ছিলেন পিবিআই পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাটমোহর সার্কেল সজিব সাহরীন, সুজানগর সার্কেল রবিউল ইসলাম, বেড়া সার্কেল কল্লল কুমার দত্তসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, মহিবুল ইসলাম খান ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পাবনায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন এবং চলতি বছরের জুন মাসে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান। তাকে র‌্যাবে বদলি করা হয়েছে। যোগদানের পরই পাবনায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ায় জেলাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন।

এরপর ধারাবাহিকভাবে ৯ উপজেলায় ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন উপহার দেন তিনি। সবশেষে এ বছরের জুন মাসে সদর উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও তার প্রশংসার ঝুলি ভারী করে। ২৫ বছর পর এই ইউনিয়নবাসী ভোট দিতে পেরে পুলিশ সুপার যেন তাদের হৃদয়পটে গেঁথে আছেন। তিনি রাজশাহী বিভাগে একাধিকবার জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন। এ সময়ের মধ্যে পাবনা পুলিশও একাধিকবার বিভাগে  শ্রেষ্ঠ জেলা পুলিশ নির্বাচিত হয়। তিনি পাবানাবাসীর হৃদয়ে যে বাসা বেধে গেছেন তা হয়তো জেলাবাসী স্মরণ করতে থাকবে।