শ্রমিকদের কুড়ি দিনের আন্দোলন চায়ের স্বাদে কি প্রভাব ফেলবে?

শ্রমিকদের কুড়ি দিনের আন্দোলন চায়ের স্বাদে কি প্রভাব ফেলবে?

শ্রমিকদের কুড়ি দিনের আন্দোলন চায়ের স্বাদে কি প্রভাব ফেলবে?

বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কুড়ি দিনের মতো আন্দোলন চলার পর প্রধানমন্ত্রী একশ সত্তর টাকা নতুন মজুরি ঘোষণার পর চা শ্রমিকেরা সোমবার থেকে কাজে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের দশ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর শনিবার এই ঘোষণা দেয়া হয়।

এমাসের নয় তারিখ থেকে দৈনিক মজুরি একশ কুড়ি টাকা থেকে বাড়িয়ে তিনশ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক।শুরুতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করলেও, তেরই অগাস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন।প্রায় কুড়ি দিন ধরে বন্ধ ছিল চা পাতা তোলা।

কি অবস্থা বাগানে

বাংলাদেশ চা সংসদের সদস্যদের একজন ওয়াহিদুল হক বলছিলেন, "সাধারণত একদম আগা থেকে কচি পাতা নেয়া হয়। এই কুড়ি দিনে গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে, ডাঁটিগুলো শক্ত হয়ে গেছে। পাতাগুলোও কালো হয়ে গেছে। এখন গাছ ছেঁটে ফেলতে হবে"।

"কাটার পর আবার পাতা তোলার পর্যায়ে আসতে তিন সপ্তাহ লেগে যাবে। গাছ ছেঁটে ফেলার আগে কিছু পাতা হয়ত তোলা হবে। কিন্তু তার পরিমাণ অনেক কম হবে। যে বাগানের শ্রমিক যত বেশি তারা হয়ত দ্রুত অবশিষ্ট পাতাগুলো তুলে তারপর গাছে ছাঁট দেবে।"তিনি বলছিলেন, বৃষ্টির মৌসুমেই চা গাছ সবচেয়ে বেশি বাড়ে। এই সময়েই সবচেয়ে বেশি এবং ভাল মানের চা পাতা পাওয়া যায়।

এরপর অক্টোবর থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত পাতা খুব ধীরে গজায়। এই সময় চা পাতা তোলা বন্ধ থাকে।"এখন বৃষ্টি যদি পর্যাপ্ত হয় তাহলে হয়ত অল্প সময়ের মধ্যে আবার পাতা তোলার মত গজাবে এবং সিজন শেষ হওয়ার আগে কিছু পাতা তোলা যাবে। বৃষ্টি না হলে খুবই সমস্যা হয়ে যাবে। সিজনটা পুরো চলে যাবে।", বলছিলেন মি. হক।

তিনি জানিয়েছেন, ধর্মঘট চলাকালীন চা শিল্পে গড়ে প্রতিদিন কুড়ি কোটির মত লোকসান হয়েছে।চা বোর্ডের তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগান ও টি এস্টেট রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১২৯টি বাগান ও টি এস্টেট। বাংলাদেশে সবমিলিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার একর জমিতে নিবন্ধিত বাগানে চা চাষ হচ্ছে।

শ্রমিকদের কাজ যাওয়ার প্রস্তুতি

মৌলভীবাজার জেলার মাধবপুর চা বাগানের বিশোকা বানিয়া পুরো সময়টা কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন।তিনি বলছিলেন, "কিছু বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। আজ আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি তাই আমরা কাল থেকে কাজে যাব সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। মজুরি আর একটু বেশি হলে আমরা খুশি হতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাই আমরা কাজে যাচ্ছি। এখন গাছের আগা কেটে ফেলতে হবে কি না, ওনারা (মালিক) কি করবেন আমরা বলতে পারছি না। কিন্তু এখন অনেক পাতা নেয়া যাবে না। পাতাগুলো বুড়ো হয়ে গেছে।"

তিনি বলছিলেন, সাধারণত সকাল নটা থেকে বাগানে চা পাতা তোলার কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। কোন ধরনের পাতা তোলা হবে সেটি শ্রমিকেরা চয়ন করেন।সাধারণত একদম আগা থেকে কচি দুটি পাতা ও একটি কুড়ি তোলা হয়। আট ঘণ্টায় তেইশ কেজির মতো চা তুলতে হয় একজন শ্রমিককে। ফ্যাক্টরিতে সেটা ওজন করে নেয়া হয়। এরপর বাতাস ও নির্দিষ্ট তাপে কয়েক দফায় চা পাতা শুকিয়ে চা বানানো হয়।

চায়ের স্বাদে কতটা প্রভাব পড়বে

মাধবপুর চা বাগানের ফ্যাক্টরির সর্দার লক্ষ্মী নারায়ণ প্রধান বলছিলেন, "এখন বাগানে যে পাতাগুলো পাওয়া যাবে সেগুলো রীতিমত অকার্যকর হয়ে গেছে।"

চা পাতা থেকে চা গুড়ো তৈরির প্রধান ধাপগুলো বর্ণনা করছিলেন তিনি।বাগান থেকে তোলা চা পাতা শুকানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি ঘরে পাতাগুলো বিছিয়ে সাধারণ তাপমাত্রার বাতাসে ২৪ ঘণ্টার মতো রেখে দেয়া হয়।

এতে পাতার আর্দ্রতা হ্রাস পায়, পাতাগুলো নরম হতে শুরু করে এবং রাসায়নিক পরিবর্তন হয়।এরপর সেগুলো মেশিনে নেয়া হয় কাটার জন্য। তারপর আবার মেশিনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুকোনো এবং গুড়ো করা হয়।চালুনি দিয়ে বিভিন্ন আকারের আট মানের চা বের করা হয়।

ভিন্ন কোন বাগানে ভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহার করা হতে পারে তবে বাংলাদেশেই এভাবেই মূলত চা তৈরি করা হয়।মি. প্রধান বলছিলেন, "কচি পাতার চায়ে সবচেয়ে ভাল লিকার পাওয়া যায়। পাতা বুড়ো, কালো এবং শক্ত হয়ে গেলে চা যেমন হওয়ার কথা সেরকম হবে না। এমন পাতা দিয়ে চা বানালে সেই চায়ের লিকার ভাল হবে না। রং বেশি গাঢ় হবে এবং স্বাদ বেশি তিতকুটে হবে", বলছিলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি