এমবাপ্পের জোড়া গোলে পিএসজির সহজ জয়

এমবাপ্পের জোড়া গোলে পিএসজির সহজ জয়

এমবাপ্পে

কিলিয়ান এমবাপ্পের নৈপুণ্যে শুরুর দিকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় পিএসজি। বিরতির পর জুভেন্টাসের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জমে ওঠে লড়াই। তবে তারকাসমৃদ্ধ প্রতিপক্ষকে আটকাতে পারেনি তারা। অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের মিশনে কাঙ্ক্ষিত শুরু পেল প্যারিসের ক্লাবটি।

নিজেদের আঙিনায় মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে পিএসজি। এমবাপ্পের জোড়া গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে জুভেন্টাসের ব্যবধান কমানো গোলটি করেন ওয়েস্টন ম্যাককেনি।

প্রথমার্ধে কোণঠাসা জুভেন্টাস বিরতির পর দারুণ লড়াই করে। ম্যাচের পরিসংখ্যানেও সেটা বেশ স্পষ্ট। পুরো ম্যাচে বল দখলে এগিয়ে থাকা পিএসজি গোলের উদ্দেশ্যে ১৫ শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ৬টি। আর ইতালিয়ান ক্লাবটির ১৩ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে, যার বেশিরভাগই দ্বিতীয়ার্ধে।

নেইমার ও এমবাপ্পের সম্পর্কে নাকি ফাটল ধরেছে-ফুটবল মহলে সাম্প্রতিক সময়ের বহুল চর্চিত গুঞ্জনটি কেবলই গুজব, ম্যাচের আগের দিন বলেন ফরাসি তারকা। মাঠে দুইজনের অসাধারণ বোঝাপড়া এবং একজনের গোলে অন্য জনের উচ্ছ্বাসে সেটাই যেন প্রমাণ হয়।

সেরি আয় প্রথম পাঁচ রাউন্ডে মাত্র দুটি গোল হজম করে জুভেন্টাস প্রমাণ দিয়েছে নিজেদের জমাট রক্ষণের। তবে ওই প্রাচীরে ফাটল ধরাতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগেনি পিএসজির।

নেইমারকে ছোট করে পাস দিয়ে চোখের পলকে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপ্পে। সামনে প্রতিপক্ষের দুই জনের ওপর দিয়ে দারুণভাবে চিপ করে ডি-বক্সে ফিরতি পাস বাড়ান নেইমার। আর প্রথম ছোঁয়ায় কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এমবাপ্পে।

ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটিতে এই নিয়ে পঞ্চমবার ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল করলেন এমবাপ্পে। এমন কীর্তি তার সমান বা বেশিবার দেখাতে পেরেছেন কেবল লিওনেল মেসি, ৬ বার।

পিছিয়ে পড়ার পর বল দখলে রেখে আক্রমণে মনোযোগ বাড়ায় জুভেন্টাস। কিন্তু প্রতিপক্ষের সীমানায় সেভাবে ঢুকতেই পারছিল না তারা। ১৯তম মিনিটে প্রথম সুযোগ আসে। ডান দিক থেকে হুয়ান কুয়াদরাদোর ক্রসে আর্কাদিউস মিলিকের জোরাল হেড দারুণ ক্ষীপ্রতায় ফেরান পিএসজি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা।

তারপরও সুযোগ ছিল। কিন্তু দুসান ভ্লাহোভিচের কোনাকুনি শট ব্যাক-ফ্লিকে ঠেকান সের্হিও রামোস, তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ফিলিপ কসতিচ। এর তিন মিনিট পরই পিএসজির দ্বিতীয় আঘাত। ডান দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো পাস আশরাফ হাকিমিকে বাড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপ্পে। এরপর ফিরতি পাস পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় জোরাল কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে মেসির পাস ধরে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন এমবাপ্পে। হ্যাটট্রিক হতে পারত তার, তবে দ্রুত গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে শেষ মুহূর্তে দুরূহ কোণ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন তিনি। এর দুই মিনিট পর ব্যবধান কমিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। সতীর্থের ছোট করে নেওয়া কর্নারে সার্ব মিডফিল্ডার কসতিচ ক্রস বাড়ান বক্সে। লাফিয়ে উঠে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ম্যাককেনি।

গোল পেয়ে যেন জেগে ওঠে জুভেন্টাস। পরের চার মিনিটে দারুণ দুটি সুযোগ পায় তারা। ৫৫তম মিনিটে ভ্লাহোভিচের জোরাল হেড ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফেরান দোন্নারুম্মা, ফিরতি বলে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশ করেন ম্যাককেনি।
৬৩তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণের আরেকটি নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি এমবাপ্পে। নেইমারের পাস ধরে মেসি বক্সে খুঁজে নেন বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে। কিন্তু এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন তিনি।

৮১তম মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে সমতা টানার দারুণ দুটি সুযোগ পান মানুয়েল লোকাতেল্লি। দারুণ নৈপুণ্যে দুবারই তাকে হতাশ করেন তার ইতালি জাতীয় দলের সতীর্থ দোন্নারুম্মা। ৮৬তম মিনিটে মেসিকে তুলে নেন কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ে। বদলি নামেন সম্প্রতি ভালেন্সিয়া থেকে আসা মিডফিল্ডার কার্লোস সলের।

এর পরপরই দুই মিনিটে দুটি শট নেন নেইমার ও এমবাপ্পে। তবে জুভেন্টাস গোলরক্ষকের নৈপুণ্যে ব্যবধান আর বাড়েনি। গত মৌসুমে বেশ কয়েকবার শক্ত অবস্থানে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজিকে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। এই ম্যাচেও চাপে পড়েছিল তারা, তবে এবার আর পথ হারায়নি দলটি।