ভারতে কমছে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার

ভারতে কমছে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার

ছবিঃ সংগৃহিত

ভারতে মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ষাট বা সত্তরের দশকে যে হারে মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়তো, এখন আর সে হারে বাড়ছে না। ভারতে দশ বছর অন্তর যে আদমশুমারি হয়, তার পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দশ বছরে দেশটির মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধাপে ধাপে কমে আসছে। তবে ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএস দাবি করেছে যে, গোটা ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি চালু করুক নরেন্দ্র মোদির সরকার। সবার জন্য এই আইন করার কথা বলা হলেও আদতে আরএসএসর এই দাবির তীর দেশটির মুসলিমদের দিকেই।

গত বছরের ১৫ আগস্ট রাজধানী নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, প্রত্যেকের পরিবারকে ছোট রাখা উচিত। সকলের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা না গেলে দেশ সুখী হতে পারে না। মোদি তার লালকেল্লার বক্তৃতায় বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের দিকে আঙুল তোলেননি। কিন্তু বলেছিলেন, সমাজের একটি অংশই পরিবারের জন্ম সংখ্যা কম রাখছে।

তবে এবার ভারতীয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ কোনও রাখঢাক না করেই জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য দেশটির মুসলিমদের দায়ী করছে। আরএসএসের প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে, ১৯৫১ থেকে ২০১১— দেশের মোট জনসংখ্যায় মুসলিমদের হার ৯.৮ শতাংশ থেকে ১৪.২৩ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু আদমশুমারির হিসেব বলছে, ২০০১-র তুলনায় ২০১১-তে ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা ২৪.৬ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে তার আগের দশকে, অর্থাৎ ১৯৯১-র তুলনায় ২০০১-তে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ২৯.৫ শতাংশ। আগের দশকগুলোতে এই হার ছিল ৩০ শতাংশের বেশি।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি কি আদৌ ভারতের চিন্তার কারণ? ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছরের জুলাইয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সমীক্ষা কিন্তু উল্টো কথাই বলেছিল। আর্থিক সমীক্ষা বলেছিল, গোটা দেশে জন্মের হার কমছে। তার ফলে দেশের জনসংখ্যায় বয়স্কদের হার বেড়ে যাচ্ছে।

নারীরা মাথাপিছু গড়ে যত জন সন্তানের জন্ম দেন, তাকেই জন্মের হার বলে। নিয়ম অনুযায়ী ভারতে জন্মের হার ২.১ শতাংশ হলে জনসংখ্যা একই থাকবে। কিন্তু আর্থিক সমীক্ষায় ভারতের মুখ্য অর্থ উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ২০২১-এই জন্মের হার ১.৮ শতাংশে নেমে আসবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে এখনই জন্মহার ১.৬ থেকে ১.৭-এর ঘরে। ফলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই সব রাজ্যের ২০ শতাংশ মানুষের বয়স হবে ৫৯ বছরের বেশি।

তবে ভারতের উগ্রবাদী আরএসএস নেতাদের আশঙ্কা, মুসলিমদের জন্মহারের কারণে ভারতের হিন্দুরা নাকি একসময় সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। আরএসএসের প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে, ১৯৫১ সালে ভারতে মুসলিম ছাড়া বাকি ধর্মের মানুষেরা ছিলেন মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ। ২০১১ সালে তা ৮৩.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু আরএসএসর এই দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতে আদমশুমারির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেন্সাস কমিশনারের কর্মকর্তারা।

তাদের যুক্তি, ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেখা গিয়েছিল, তার আগের দশকে মুসলিমদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ২০০১ সালের তুলনায় ২০১১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৭ শতাংশ। মুসলিমদের ২৪.৬ শতাংশ। কিন্তু হিন্দুদের বৃদ্ধির হারও ছিল ১৬.৮ শতাংশ। মুসলিমরা জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ হলে হিন্দুরা ৭৯.৮ শতাংশ। প্রতিটি আদমশুমারিতেই দেখা যাচ্ছে, হিন্দুদের মতোই মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমে আসছে। ফলে ভারতে হিন্দুদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

এদিকে ভারতে আদমশুমারি বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, শিক্ষার হার, আয় বাড়লেই পরিবার পরিকল্পনার প্রভাব দেখা যায়। পারিবারিক সিদ্ধান্তগ্রহণে নারীদের ভূমিকা বেড়ে যায়। মুসলিমদের পুরুষ-নারীর অনুপাতও বেড়েছে। ২০০১ সালে প্রতি হাজার জন মুসলিম পুরুষে নারীদের সংখ্যা ছিল ৯৩৬ জন। ২০১১ সালে তা বেড়ে ৯৫১ হয়েছে। হিন্দু-খ্রিস্টানদের মতো মুসলিমদের মধ্যেও শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়ায় জন্মের হার কমতে শুরু করেছে। সূত্র : আনন্দবাজার।