ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : রাতে বিস্ফোরণ-আতঙ্ক, দিনভর বিক্ষোভ-উত্তাপ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : রাতে বিস্ফোরণ-আতঙ্ক, দিনভর বিক্ষোভ-উত্তাপ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : রাতে বিস্ফোরণ-আতঙ্ক, দিনভর বিক্ষোভ-উত্তাপ

মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুইটি ছাত্র হলের পাশে বেশ কয়েকবার বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে সেখানে হট্টগোল, উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ-বিতন্ডা হয়। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। এতে ক্যাম্পাস ও প্রশাসন ভবনে উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও লালন শাহ হলের পাশে তিনটি করে অন্তত ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক লাঠিসোঁঠা নিয়ে হলের অভ্যন্তর ও বাইরে মহড়া দিয়ে জড়িতদের খুঁজতে থাকেন। নেতাকর্মীদের দাবি, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পরে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নেতাকর্মীরা নিজ নিজ কক্ষে ফিরে যান। তবে, ঘটনার পর প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে উপাচার্য একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার থেকে ফেরার পথে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে সামনে তাকে ঘিরে ধরে দাবির কথা জানান নেতাকর্মীরা। এসময় উপাচার্য অফিসে গিয়ে গিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের নেতৃত্বে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মিজানূর রহমান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সেখানে উপস্থিত  ছিলেন।

সেখানে রাতের ঘটনায় শঙ্কা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি এবং জড়িতদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান নেতাকর্মীরা। এসময় উপাচার্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিষয় জানালেও অনাস্থা ও অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে কার্যালয়ে হট্টগোল শুরু হলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে উপাচার্য ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বাগ-বিতন্ডা হয়।

একপর্যায়ে উপাচার্য ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক অন্য নেতাকর্মীদের কার্যালয় থেকে বের করে দেন। নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় তারা বিস্ফোরনের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।

পরে উপাচার্যের সভাকক্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে প্রায় আধা ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও শাপলা ফোরামের সভাপতি। বৈঠক চলাকালে কক্ষের বাইরে নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মুন্সি শহিদ উদ্দিন মো. তারেক ও উপাচার্যের একান্ত সচিব আইউব আলীর পদত্যাগ দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। পরে বৈঠক শেষে প্রশাসন ভবন ত্যাগ করেন উপাচার্যসহ অন্য কর্তাব্যাক্তিরা। এসময় শ্লোগান দিতে দিতে নেতাকর্মীরাও চলে যান। এদিকে, নিরাপত্তার দাবি থেকে হঠাৎ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নেতাকর্মী ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, আমরা রাতের ঘটনার পর নিরাপত্তার দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করি ও ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করে দাবির কথা জানাই। তিনি আমাদের আশ^স্ত করলে পরে চলে এসেছি। দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের কোন লক্ষ্য ছিল না। শিক্ষার্থীরা হয়তো কার্যালয়ে তাদেরকে দেখে বিচ্ছিন্নভাবে এসব শ্লোগান দিয়েছে। আমরা চাই স্বাধীনতার বিপক্ষের লোকজন প্রশাসনিক দায়িত্বে না থাকুক।

প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুলিশকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা কাজ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ প্রশাসন প্রক্টরিয়াল বডি সক্রিয় রয়েছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সিসি টিভি ফুটেজসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘রাতের ঘটনাই আমরা বসে নেই। পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিব। আজ আমাদের একজন শিক্ষক মারা গেছেন। এমন শোকের দিনে এবং বিদেশী অতিথি ক্যাম্পাসে থাকাবস্থায় উপাচার্যের কার্যালয়ে এসে হট্টগোল কোনভাবেই কাম্য না। আমি কোন কাজে নিয়মের বাইরে যাবো না। কারো কাছে মাথা নত করবো না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাকে জানালে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এভাবে হঠাৎ পদত্যাগ দাবি করা অবান্তর।’