ইবিতে অনুমোদন ছাড়াই খুলল সিলগালা দোকান

ইবিতে অনুমোদন ছাড়াই খুলল সিলগালা দোকান

ছবি: ইবি প্রতিনিধি

ইবি প্রতিনিধি: ছয় বছর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একটি ফটোকপির দোকানকে সিলগালা করেছিল তৎকালীন প্রশাসন। দোকানটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনোজিত কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেলে দোকানটি  সিলগালা করা হয়। একইসঙ্গে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে ছাত্রত্ব বাতিল করে তার নামে মামলা করে প্রশাসন। এরপর থেকে তালাবদ্ধ ছিল দোকানটি। 

দীর্ঘদিন পর গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে দোকানটি খুলেন মনিরুল ইসলাম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আরেক দোকানী। প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় তিনি দোকান খুলেছেন বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে দোকানটি পেতে প্রশাসন বরাবর করা তার আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান। এদিকে দোকান খোলার বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম। তিনি দোকান খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টরের মৌখিক নির্দেশনার কথা জানান মনিরুল। কিন্তু লিখিত অনুমতি পত্র না থাকায় তাকে দোকান বন্ধ করতে বলেন সেলিম। পরে দোকান বন্ধ করে চলে যান মনিরুল। 

এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, দোকানটি পেতে আমি অনেকদিন আগেই প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছি। দোকানটির পূর্বের মালিক মনোজিতও আমার বরাবর দোকানটি হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছে প্রশাসনে। প্রক্টর স্যার গত সপ্তাহেই আমাকে বলেছেন দোকান খুলে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে। তার মৌখিক নির্দেশনায় আমি গতকাল কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে দোকান খুলতে যাই। স্যার পরে কাগজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমার কাছে লিখিত অনুমতি পত্র না থাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বলার পর দোকানটি বন্ধ করে চলে আসি। এতে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ আমার দুই হাজার চারশ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পুরোনো তালা ভেঙ্গে ফেলায় নতুন একটি তালাও লাগিয়ে দিয়েছি। প্রক্টর স্যার না বললে আমি যেতাম না।

তবে প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ওই ব্যাক্তিকে দোকান খোলার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কাউকে দোকান খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দেইনি। এটি যেহেতু আইনগত প্রক্রিয়ায় আটকে ছিল তাই দোকান খোলার বিষটি জানতে পারলে নিরাপত্তা কর্মকর্তার মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়েছি। দোকান খোলার  অনুমতি তো আমি দেব না, এটি এস্টেট অফিসের দায়িত্ব তারা অনুমতি দেবে। সে বলেছে আগের মালিক মনোজিত মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে, আমরা শনিবার আদালতের কাগজ দেখতে চেয়েছি। 

 

এদিকে দেকানটি চালুর বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় তদবির করছেন বলে জানা গেছে। পূর্বের মালিক মনোজিত ও নতুন করে মালিকানা প্রত্যাশী মনিরুল ছাত্রলীগ নেতাদের সুপারিশ ও তদবিরের বিষয়টি স্বীকার করেন। মনোজিত কুমার বলেন, ‘আমি দোকানটি আর চালাতে চাইনা। অন্য কাউকে দিতে চাই। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ও সম্পাদক জয়ের সাথে কথা হয়েছে। তারাই বিষয়টি ডিল করতেছে। কাকে দিলে ভালো হবে তারাই দেখছে। আমার কাছে দোকান মূখ্য বিষয় না, আমার চাওয়া সার্টিফিকেটগুলো তুলতে পারা।’ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আরাফাত ও জয় আমার এলাকার ছোট ভাই। আমি যেন দোকানটি না পাই এজন্য অনেকে পেছন ষড়যন্ত্র করলেও ওরা আমার জন্য প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছে।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, কিন্তু এর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। এটি এস্টেট অফিসের কাজ, আমরা সুপারিশ কেন করবো?’ সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘এটি প্রশাসনের কাজ, তারা তাদের মতো করে করবে। এটা ছাত্রলীগের কাজ না। আমাদের এখানে সুপারিশ করার তো সুযোগই নেই।’

বিষয়টি নিয়ে এস্টেট অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘দোকানটি যেহেতু আইনগতভাবে বন্ধ তাই এটি চালু করতে হলে সব প্রক্রিয়া মেনে লিখিত সিদ্ধান্তে করতে হবে। দোকানটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুনেছি। কিন্তু এস্টেট অফিস থেকে দোকান খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

পসঙ্গত, ‘ক্যাম্পাস লাইব্রেরী এন্ড ফটোকপি’ নামের দোকানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন ও অনুষদ ভবনের মাঝে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবষের্র শিক্ষার্থী মনোজিত মন্ডল দোকানটি পরিচালনা করতেন। দোকানটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৩৭৫। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ‘এফ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পেলে মনোজিতের ছাত্রত্ব বাতিল, দোকান সিলগালাসহ তার বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেসময় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। মনোজিতের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মনোজিত মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। পরে তিনি সনদ উত্তোলনের জন্য আবেদনপত্র নিয়ে গত জুলাইয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। তবে মামলা থেকে অব্যাহতি ও সনদ উত্তোলনের আবেদনের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ।