রাশিয়ার হাতে কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে

রাশিয়ার হাতে কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে

রাশিয়ার হাতে কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ষাট বছরের মধ্যে বিশ্ব এবার পারমাণবিক যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

মি. বাইডেন বলেছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন বলেন যে ভূখণ্ড রক্ষায় ''আমাদের হাতে যা আছে'' মস্কো তার সব ব্যবহার করবে-সেটি নিছক মজা নয়।মি. পুতিন অবশ্য এও বলেছেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র নজির গড়েছিল।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন মি. পুতিনের কথাগুলো হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছের চেয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অন্য দেশ যাতে না জড়ায় সে লক্ষ্যেই বলা হয়েছে।বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্ব আছে প্রায় আশি বছর ধরে এবং অনেক দেশের কাছে এটি তাদের জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার গ্যারান্টি।

কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার কাছে?

এ সম্পর্কিত সব তথ্যই কার্যত ধারণার ভিত্তিতে করা। তবে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট-এর মতে রাশিয়ার হাতে ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। যদিও এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার আছে মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং ধ্বংস করে ফেলার জন্য প্রস্তুত।

আর বাকি প্রায় সাড়ে চার হাজারের মত যেগুলো, সেগুলোকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়- অর্থাৎ ব্যালিস্টিক মিসাইল কিংবা রকেট- যা দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।এসব অস্ত্রই মূলত পারমাণবিক যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত।আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল ১১৮৫টি, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ঘাঁটি বা সাগর এলাকায় মোতায়েন আছে।

সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক মিসাইল ৮০০টি এবং এগুলোর বেশিরভাগও বিভিন্ন ঘাঁটি বা সাগর এলাকায় মোতায়েন আছে।বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য পারমাণবিক বোমা ৫৮০টি। এর বেশিরভাগ আবার সংরক্ষিত অবস্থায় আছে।এর বাইরে আছে ছোট আকারের ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র যা স্বল্পপাল্লায় যুদ্ধক্ষেত্রে বা সাগরে ব্যবহারের জন্য।

তবে এর মানে এই নয় যে রাশিয়ার হাজার হাজার দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র এখনই প্রস্তুত অবস্থায় আছে।বিশেষজ্ঞদের ধারণা প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র এখন মোতায়েন আছে বিভিন্ন জায়গায়। অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা আছে ঘাঁটিগুলোতে বা সাবমেরিনে।

অন্য দেশের তুলনায় কী অবস্থা?

বিশ্বে নয়টি দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা আছে: চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এর মধ্যে রাশিয়ার আছে ৫৯৭৭টি, নেটোর ৫৯৪৩টি (যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪২৮, ফ্রান্সের ২৯০ ও যুক্তরাজ্যের ২২৫), চীনের ৩৫০, পাকিস্তানের ১৬৫, ভারতের ১৬০, ইসরায়েলের ৯০ এবং উত্তর কোরিয়ার ২০টি। (তথ্য সূত্র: ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট)।চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১৯১টি দেশ পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে সাক্ষর করেছে।

এ চুক্তির আওতায় তাদের পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার কমিয়ে আনার কথা এবং তাত্ত্বিকভাবে পরমাণু অস্ত্র থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসার কথা।কিন্তু ভারত, ইসরায়েল ও পাকিস্তান কখনো এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। আর উত্তর কোরিয়া সই করলেও চুক্তি থেকে সরে গেছে ২০০৩ সালে।

এর মধ্যে ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার পারমাণবিক কর্মসূচি স্বীকারই করেনি।ইউক্রেনের কোন পারমাণবিক অস্ত্র নেই। প্রেসিডেন্ট পুতিন অভিযোগ করলেও ইউক্রেন এ ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে বলে কোন প্রমাণ নেই।

পারমাণবিক অস্ত্র কতটা ধ্বংসাত্মক?

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিই করা হয় সর্বোচ্চ ধ্বংস নিশ্চিত করার জন্য।তবে এ ধ্বংস বা বিপর্যয়ের পরিমাণ নির্ভর করে অস্ত্রের বিভিন্ন দিকের উপর।

যেমন:

অস্ত্রের আকার

ভূমি থেকে কত ওপরে বিস্ফোরণ ঘটে

স্থানীয় পরিবেশ

একটি একশ কিলোটন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র প্রায় এক দশমিক ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তু পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম। আর তা ভয়ংকর বিপর্যয় ঘটায় প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। যথেষ্ট ক্ষতি করে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আর কিছুটা হলেও ক্ষতি করে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা।

এমনকি একটি ছোটো অস্ত্রও ব্যাপক জীবনহানি ছাড়াও মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় ১৫ কিলোটনের বোমায় মারা গিয়েছিলো ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ।

আর পারমাণবিক অস্ত্র এখন এক হাজার কিলোটনের বেশিও হতে পারে।পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের পর অনেক অগ্নিগোলক দেখা যায় এবং বিস্ফোরণের ঢেউ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ভবনসহ অন্য অবকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে।

সূত্র  :  বিবিসি