রাজধানীতে চোরাই স্বর্ণালংকার ও টাকাসহ ৬ জন গ্রেফতার

রাজধানীতে চোরাই স্বর্ণালংকার ও টাকাসহ ৬ জন গ্রেফতার

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর খিলক্ষেত থানার একটি বাসা থেকে স্বর্ণ, রূপা ও নগদ টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. জব্বার মোল্লাহ, মো. জামাল সিকদার, মো. আবুল, আজিমুদ্দিন, মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. আব্দুল ওহাব।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণ, ৮২ ভরি রূপা ও নগদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
শনিবার রাজধানীর তাঁতীবাজার, পল্লবী ও টঙ্গী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার  করা হয়।
আজ রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত চোরেরা গত ১৭ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নম্বর রোড়ে ডাক্তার দম্পতির বাসায় দরজা ভেঙ্গে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ইউএস ডলার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন।

তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্ত শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত চোরদের শনাক্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর তাঁতীবাজার, পল্লবী ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের সর্দার ও স্বর্ণের দোকানের মালিকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, চোর চক্রটির সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহ। সে সবসময় সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি ও মাথায় টুপি পরে থাকে। এই বেশভূষাগুলোই তার প্রধান হাতিয়ার। দাড়ি টুপি-পাঞ্জাবি পরা থাকায় কোন অপরিচিত ভবনে উঠলেও প্রাথমিকভাবে কেউ তাদেরকে সন্দেহ করে না। কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কৌশলে প্রশ্নের উত্তর দেয়। এই চোর চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে একত্রিত হয়। একটি এলাকা থেকে হাঁটা শুরু করে এবং সুবিধামত ভবন টার্গেট করে। টার্গেটকৃত ভবনের  বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে যে বাসার প্রধান দরজা লক করা থাকে, সেই বাসার দরজা ভেঙ্গে তারা চুরি করে।

গ্রেফতারকৃতদের অপরাধের কৌশল সর্ম্পকে ডিবি প্রধান বলেন, ৮ থেকে ১০ বছর বয়স থেকে তারা ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ সংসদ ভবনের আশেপাশের এলাকায় টোকাইগিরি করত। ওই সময় তারা বাসা বাড়ির ছাদে রোদে দেয়া জামাকাপড়, জুতা, রড ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করতো। চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়। পরে তারা একত্রে চুরি করা শুরু করে। বর্তমানে তাদের বয়স প্রায় ষাট বছর। দীর্ঘদিন যাবৎ একই কাজে জড়িত থাকায় তারা অত্যন্ত দক্ষ এবং স্বল্প সময়ে চুরি করে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বিগত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে চুরি করে আসছিল তারা। চুরি করার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে, সেমতে পরদিন সকালবেলা তারা এলাকায় হাজির হয়। একত্রে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকে এবং খেয়াল করে দেখে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।  তারা বাসা টার্গেটের পর দু’জন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে, বাকি ২ থেকে ৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে। তারা ১০ মিনিটের মধ্যে চুরির কাজ শেষ করে। চোরাইকৃত মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যায়। ওই চোর চক্র শুধুমাত্র মূল্যবান অলংকার ও বিদেশি কারেন্সি ও টাকা ইত্যাদি চুরি করে।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।
নিরাপত্তার স্বার্থে বহুতল ভবনে সিসি ক্যামেরা ও দারোয়ান রাখার জন্য বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেন ডিবি প্রধান।

সূত্র: বাসস