বগুড়ায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ

বগুড়ায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ

ফাইল ছবি

বগুড়ায় সাত বছরের শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় জড়িত চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একইসাথে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

রোববার (২৩ অক্টোবর) বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নম্বর-২-এর বিচারক নূর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বগুড়ার ধুনট উপজেলার নশরতপুর গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে বাপ্পি আহম্মেদ (২৪), দলিল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে কামাল পাশা (৩৭), ছানোয়ার হোসেনের ছেলে শামিম রেজা (২৪) ও মৃত সাহেব আলীর ছেলে লাভলু শেখ (২৩)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ধুনটের নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকন ও তার স্ত্রী মরিয়ম ডেইজি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। তাদের মেয়ে মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম দাদা আবদুস সবুরের বাড়িতে থাকতো। সে স্থানীয় পাঁচথুপি-নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস কবরস্থান চত্বরে দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তাবাচ্ছুম দাদা ও ফুফুর সাথে প্রথম দিনের তাফসির শুনতে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে সে মিষ্টি কিনতে মঞ্চের পাশের দোকানে যায়। সেখানে খোকনের সাথে পারিবারিক বিরোধ থাকা কলেজছাত্র বাপ্পী আহমেদ স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে তাকে দেখে বাদাম কিনে দেয়ার প্রলোভনে স্থানীয় হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে বাপ্পী ও তার তিন বন্ধু কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাবলু শেখ পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশু তাবাচ্ছুম নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন বাপ্পী তাকে গলাটিপে হত্যা করেন। কোনো প্রাণী তাকে কামড়ে হত্যা করেছে এমন প্রমাণ করতে কাটিং-প্লাস দিয়ে তাবাচ্ছুমের হাতের একটি আঙুল কেটে দেয়। এরপর লাশটি কাঁধে তুলে মঞ্চের কাছে বাদশা মিয়ার বাঁশঝাঁড়ে ফেলে দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

আরো জানা যায়, পরদিন ১৫ ডিসেম্বর তাবাচ্ছুমের বাবা খোকন অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাপ্পীর সাথে পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করে। সন্দেহভাজন বাপ্পী ও তার তিন বন্ধুকে পর্যবেক্ষণে রাখে পুলিশ। ২৫ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে বাড়ি থেকে শামীম রেজাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে বাপ্পী, রেজা ও লাবলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চারজনই শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর চারজনকে আসামিকে করে ধুনট থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহিদুল হক আদালতে চার্জশিট জমা দেন। পরে সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আশিকুর রহমান সুজন জানান, তাবাচ্ছুম হত্যা মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট।

সূত্র: নয়াদিগান্ত