১০১ বই দেনমোহরে ঘর বাঁধলেন মিথুন-অন্তরা

১০১ বই দেনমোহরে ঘর বাঁধলেন মিথুন-অন্তরা

১০১ বই দেনমোহরে ঘর বাঁধলেন মিথুন-অন্তরা

উপহার হিসেবে বইয়ের জুড়ি না থাকলেও দেনমোহর হিসেবে বই প্রত্যাশা ব্যাতীক্রমই। এমন ব্যাতিক্রমী ইচ্ছে থেকে ১০১টি বই দেনমোহরে বিয়ের পিড়িতে বসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা। গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে একটি সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল মিথুনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের উভয়ের বাড়ি চূয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলায়।

বিয়ের আসরে দেনমোহর নিয়ে দরকষাকষির দৃশ্য যখন সচরাচর তখন ব্যাতিক্রমী এই দেনমোহরের চাহিদা অবাক করেছে বরপক্ষসহ সবাইকে। শেষ পর্যন্ত কনের ইচ্ছের ভিত্তিতে ১০১টি বই হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভিন্নধর্মী এই দেনমোহর পরিশোধ করে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্টির কথা জানান বর-কনে দুজনই। বইগুলো নিয়ে পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ার কথা জানান তারা।

সুমইয়া পারভীন অন্তরা বলেন, ‘একটা সময় ভাবতাম হয়তো অর্থ ও স্বর্ণালংকারই কেবল দেনমোহর হতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইসলামের ইতিহাসে পড়ার সময় জানতে পারি অন্য যে কোন কিছুই দেনমোহর হতে পারে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিয়েতে ১০১টি বই দেনমোহর হিসেবে চাইব। আমি আমার ইচ্ছের কথা বাবা-মাকে জানালে তারা প্রথমে অবাক হলেও আমার চিন্তার প্রশংসা করেন। আমার বাবা তখনই বইয়ের নাম সংগ্রহ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমি পছন্দের ১০১টি বইয়ের নাম সংগ্রহ শুরু করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে ঠিক হলে বিয়ের পূর্বেই আমার স্বামীকে দেনমোহর নিয়ে আমার চিন্তার কথা জানাই। তিনি শুনে প্রথমে অবাক হলেও আমার ইচ্ছে পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। আমি তাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোন সংখ্যক বই প্রদানের স্বাধীনতা দিলেও তিনি আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী ১০১টি বই-ই নগদ হস্তান্তর করেছেন।’

ব্যাতিক্রমী এই চিন্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখে থাকি সমাজে বিয়ের দেনমোহর নিয়ে অনেক দরকষাকষি হয় এবং অনেক উচ্চহারে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই দেনমোহরের অধিকাংশই অপরিশোধিত থাকে। আমি মনে করি, এমন উচ্চ দেনমোহরে কাউকে বেঁধে রেখে সংসার করা যায় না, যে আমাকে ভালোবাসে সে এমনিতেই আমার সঙ্গে থাকবে। এ ছাড়া আমার স্বামীর কাধে দেনমোহরের এই ঋণের বোঝা থাকুক এটাও আমি চাইনি। এজন্যই ছাত্রজীবনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

স্ত্রীর ব্যাতিক্রমী ইচ্ছে নিয়ে রুহুল মিথুন বলেন, ‘বিয়ের আগে দুই পরিবারের আলোচনার সময় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে দেনমোহর হিসেবে অর্থ প্রস্তাব করা হলেও আমার শ্বশুর তার মেয়ের ইচ্ছের কথা জানান এবং ১০১টি বইয়ের লিস্ট প্রদান করেন। এতে সবাই অবাক হন, পরে আমি তাদেরকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। লিস্ট ধরে বইগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে, তবে বিষয়টিকে খুবই উপভোগ করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিয়ের আসরেই দেনমোহর পরিশোধ করি এবং আমরা দুজনেই বিষয়টি নিয়ে খুবই খুশী। বিয়ের পড়ানোর সময় কাজী প্রথমে এমন দেনমোহরে কিছুটা আপত্তি জানান, তবে সবাই মিলে তাকে বোঝানোর পর বই দেনমোহর হিসেবে রেখেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। আমারো ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল, যে কারণে বইপ্রেমী কাউকে জীবনসঙ্গীনী হিসেবে চাইতাম। সৃষ্টিকর্তা সেটি পূরণ করেছেন।’