করোনা ভাইরাস: মৃত্যুর মিছিলে ৯১০, আক্রান্ত ৪০ হাজার

করোনা ভাইরাস: মৃত্যুর মিছিলে ৯১০, আক্রান্ত ৪০ হাজার

ফাইল ফটো

করোনা ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে ১ জন করে মোট ৯১০ জন নিহত হয়েছে। এ ভাইরাসে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৭১ জন এবং চীনের বাইরে ৩৮৩ জন। সবমিলিয়ে পুরো বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৫৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩ হাজার ৩৪২ জন। সোমবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। খবর সাউথ চায়না মর্নি পোস্ট।

প্রতিদিনই করোনায় মৃতের সংখ্যা ও আক্রান্ত বাড়ছে সাথে আতঙ্ক, ভয় ও শঙ্কা। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৯৭ জন, যা একদিনে সবচেয়ে বেশি মারা যাওয়ার রেকর্ড। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৯১০ জন মারা গেছে। যা ২০০২-২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

সোমবার সকালে চায়নার জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, চীনে গত এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬২ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪০ হাজার ১৭১ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৫০০ জনের অবস্থা ভয়াবহ বলে জানানো হয়েছে।

হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হুবেইতে নতুন করে ২ হাজার ৬১৮ জন আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে প্রদেশটিতে নিহত হয়েছে ৮৭১ জন, আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৭১৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯৭ জনের মধ্যে শুধু হুবেইতে ৯১ জন, বাকি ৬ জন মারা গেছে চীনের অন্যান্য এলাকায়। হুবেইতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ জন সুস্থ হয়েছে।

হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান, যেখানাকার একটি সামুদ্রিক খাদ্য ও মাংসের বাজার থেকে এই করোনা ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য চীন হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ওই অঞ্চলের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে চীনসহ বাইরের বিশ্ব থেকে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ আক্রান্তের খবর আসছে, তাতে আক্রান্তের আসল খবর জানা যাচ্ছে না। কারণ, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, শুধু তাদের হিসেব পরিসংখ্যানে ধরা হচ্ছে। তাই এর প্রকৃত হিসেব বের করা বা জানা খুবই কঠিন ব্যাপার, যা আরেকটি আশঙ্কার কারণ।

চীনের সবগুলো প্রদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ২৭০ জন আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীন ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা জারি এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে অনেক দেশ। ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশ চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভিসা বাতিল করেছে। ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চীনে অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।

গুয়াংডং-সহ দেশটির যেসব প্রদেশের বাসিন্দা ৩০ কোটির বেশি সেসব শহরে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির কারখানাগুলোতে দিনে মাত্র ২ কোটি মাস্ক তৈরির সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের শিল্প-প্রতিষ্ঠানবিষয়ক বিভাগের মুখপাত্র তিয়ান ইউলং। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ইউরোপ, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্ক আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কাজাখস্তান, হাঙ্গেরিসহ বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশ মেডিকেল সহায়তায় হাত বাড়িয়েছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাইওয়ান ও ইসরায়েলস ২৫টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগীকে শনাক্ত করা হচ্ছে।