নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে ইইউ-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শুরু

নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে ইইউ-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শুরু

নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে ইইউ-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শুরু

৪৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উপলক্ষে প্রথমবারের মত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এবং ১০-সদস্যের অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) আজ বুধবার ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলন শুরু করছে।

"বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে আমি এটাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আসিয়ানের জন্য কৌশলগত অংশীদারি এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুসরণের অঙ্গীকার করার সুযোগ হিসেবে দেখছি,” সম্মেলনের পূর্বে ইইউ-র এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান।

"আমরা কৃতজ্ঞ যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগে আসিয়ানও অংশীদার হয়েছে,” ঐ কর্মকর্তা জানান। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার, কোরীয় উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের দিকে ইউরোপীয়দেরও মনোযোগ দিতে হবে।তবে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি চীনকে কেন্দ্র করে। এ কারনে বেইজিংয়ের সাথে শীতল সম্পর্কের মাঝে আসিয়ান দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি ইইউ নেতাদের জন্য অগ্রাধিকার।

আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) চেয়ারম্যান চার্লস সান্তিয়াগো ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে অঞ্চলে একটা বিকল্প ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। রাশিয়ার সাথে আসিয়ান দেশগুলোর শক্ত সম্পর্ক গড়া থেকে সরিয়ে আনার দিকে ইইউ মনোযোগ দিয়েছে বলে তিনি জানান।তবে, আসিয়ান-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টা এখনো আলোচনায় গড়ায়নি বলে সান্তিয়াগো উল্লেখ করেন।

"আসিয়ানের সাথে ইউরোপ তার বাণিজ্য সম্পর্ক রাখতে চায় কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। ইইউ লিথিয়ামের মতো কাঁচামালের উৎস খুঁজছে, যা আসিয়ান দিতে পারে। এই মুহূর্তে, যেকোন ধরনের বাণিজ্য আলোচনার ফোকাস হচ্ছে কিভাবে চীন এবং রাশিয়ার প্রবল প্রভাব রুখে দেয়া যায়,” বলেছিলেন তিনি।

আপাতত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি না

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হচ্ছে আসিয়ান, যাদের সাথে ২০২১ সালে পণ্যর ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় ২১৬ বিলিয়ন ইউরো।

আসিয়ান দেশগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান রপ্তানি হল রাসায়নিক পণ্য, যন্ত্রপাতি এবং পরিবহণ সরঞ্জামাদি। অন্যদিকে, আমদানি পণের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি এবং পরিবহণ সরঞ্জাম, কৃষি পণ্য, টেক্সটাইল এবং পোশাক।

আসিয়ান-ইইউ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ২০০৭ সালে আলোচনা শুরু করে, কিন্তু চুক্তি করার পরিবর্তে তারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পন্থা বেছে নেয়।ইউরোপীয় কমিশনের মতে, এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।আসিয়ান দেশগুলোর সাথে ইইউ পৃথকভাবে বানিজ্য আলোচনা শুরু করে এক দশকের বেশি সময় আগে। ২০১০ সালে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার সাথে, ২০১২ সালে ভিয়েতনাম, ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৫ সালে ফিলিপাইন এবং ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করে।

আগামীকাল শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের সাথে বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার আশা করছে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা নিয়েও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন আসিয়ান দেশগুলোর সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহণ, ডিজিটাল খাত এবং অবকাঠামো বিকাশের জন্য একটি ইইউ বিনিয়োগ প্যাকেজ পেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

কোণঠাসা মানবাধিকার

ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডারের মত মানবাধিকার সংস্থাগুলো এক বিবৃতিতে আসিয়ান নেতাদের সম্মেলনের সময় মানবাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা আহ্বান জানিয়েছে।মিয়ানমারে অভ্যুত্থান এবং ইন্দোনেশিয়ায় একটি নতুন ফৌজদারি বিধি পাস করে সরকারের সমালোচনা ও বিয়ের বাইরে যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করার বিষয় দুটি মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আসিয়ান দেশগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়।

তবে, সান্তিয়াগোর জানিয়েছে, আলোচনা টেবিলে যখন বাণিজ্য ও অর্থনীতি থাকে তখন মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পায় না।তার মতে, "বানিজ্য যখন মুখ্য তখন গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকার পিছিয়ে পড়ে।"বহুপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির উপরও ফোকাস করে শীর্ষ সম্মেলন শেষে ইইউ-আসিয়ান একটি যৌথ বিবৃতি জারি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র : ডযচে ভেলে