চিংড়িতে ভেজাল অব্যাহত থাকায় বাজার হারানোর শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা

চিংড়িতে ভেজাল অব্যাহত থাকায় বাজার হারানোর শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা

সংগৃহীত

বাগেরহাটে কয়েক বছর ধরে চিংড়িতে ভেজাল বন্ধে পুলিশ, র‌্যাব ও মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার চিংড়ি। এছাড়া ওজন বাড়াতে এবং অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য চিংড়িতে জেলি, পানি, ভাতের মাড় এবং ক্ষতিকারক পদার্থ প্রবেশ করানো হয়। এতে করে রপ্তানিকারক ও ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

এছাড়া চিংড়ি রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন যে, চিংড়িতে ভেজাল অব্যাহত থাকলে বিদেশের বাজার হারাবে।

চিংড়ি একসময় বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বাধিক রপ্তানিকৃত পণ্য ছিল। কিন্তু, গত কয়েক বছরে এটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে চিংড়ি।

গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যবসায়ীরা যখন চিংড়ির মধ্যে জেলি জাতীয় পদার্থ ইনজেকশন করছিল, তখন বাগেরহাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায়  এক হাজার ৬৬০ কেজি চিংড়ি জব্দ করেছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস (ডিএফও) এই সময়ের মধ্যে বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, রামপাল এবং মংলা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন।

ওই অভিযানে প্রায় এক হাজার ৬৬০ কেজি চিংড়ি জব্দ ও ধ্বংস করা হয় এবং ৯ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়া পাঁচ ব্যবসায়ীর জরিমানাসহ তাদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করা হয়।

ডিএফও দল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে এবং ৫৪০ কেজি ভেজাল চিংড়ি জব্দ করেছে।

এছাড়া ওই অর্থবছরে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, তারা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কীভাবে মান বজায় রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি। যাইহোক, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য এই জাতীয় পদার্থ ইনজেকশন চালিয়ে যাচ্ছে।

 

জেলার চিংড়ি চাষিরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে ভেজালের কোনও সুযোগ নেই। জেলার প্রায় ৫৫ হাজার কৃষক চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, এই অসাধু প্রথার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী।

তিনি বলেন, আমরা মান বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। আমাদের পক্ষ থেকে ভেজালের কোনও সুযোগ নেই। এর জন্য ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা দায়ী।

জেলার বারাকপুর পাইকারি মাছ বাজারের সভাপতি সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, তারা ভেজাল চিংড়ি বাজেয়াপ্ত করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন বাজার থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা চিংড়ি কেনার পর মূলত ভেজাল প্রক্রিয়া ঘটে।

এছাড়া তারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে রপ্তানিকারকদের কাছে পণ্যে পদার্থ প্রবেশ করিয়ে বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেনেশুনে ভেজাল চিংড়ি কেনে।

তিনি ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত, চিংড়ি দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে একটি।

জেলার মৎস্য বিভাগের মতে, ৭২ হাজার ৭২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭৭ হাজার ঘের (‘ঘের’, যাকে স্থানীয়রা বলে) রয়েছে।

তারমধ্যে, কালো বাঘ চিংড়ি বা ‘বাগদা’ চাষের জন্য ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে ৫২ হাজার ঘের এবং ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্ক্যাম্পি চিংড়ি বা ‘গলদা’ চাষের জন্য মোট ২৫ হাজার ঘের রয়েছে।

গত অর্থবছরে বাগেরহাটে মোট ৩৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে।

সূত্র: ইউএনবি