শ্যামনগরে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শ্যামনগরে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সংগৃহীত

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ৭৮ টি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার উপজেলায় নকিপুর পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর মুহাম্মদ (তেজারত)’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি  হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মোঃ আক্তার হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর সরকারি মহসীন ড্রিগ্রী কলেজের প্রভাষক প্রতাপ রায় ও এসইডিপি এর অফিসার-১ মোঃ নজরুল ইসলাম। এছাড়া  কর্মশালায় শ্যামনগর উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংগঠকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

একাডেমিক সুপারইজার মিনা হাবিবুর রহমান কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। এছাড়াও পরিপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠার জন্য বই পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বইপড়া থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথাটি উল্লেখ্য করে বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ার অভ্যাস গড়ে দিতে পারলেই উন্নত জাতিগঠন সম্ভব। তাই আপনারা ক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন।

উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র কর্মপরিকল্পনা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের টিম ম্যানেজার আব্দুলাহ মুহাম্মদ কুরাইশী। তিনি বলেন, উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাদের মন এবং বয়স উপযোগী বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলা। পাঠাভ্যাসের প্রসার ও সুযোগ বৃদ্ধি করা। কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, বইপড়া শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি টেকসই ও কার্যকর  করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। বইপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আজকের এই কর্মশালা।

বিশেষ অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশান উইং এর মনিটরিং অফিসার-১ মোঃ নজরুল ইসলাম পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে কর্মসূচীর সম্পর্ক তুলে ধরেন। পরিচিতি তুলে ধরার মাঝে বই ও বই পড়ার ব্যাপারে গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠের অভ্যাস কমে গিয়েছে। সে অভ্যাস তুলে ধরে মেধা ও মননের বিকাশ সাধন করতে সবাইকে উদ্ভূদ্ধ হতে হবে এবং কর্মসূচীর সফলতা কামনা করেন।

বিশেষ অতিথি  ড. প্রতাপ কুমার রায় বলেন, আলোকিত মানুষ গড়তে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই পড়ানোর দায়িত্বটা মূলত আপনাদের (শিক্ষকদের) পালন করতে হবে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত ও প্রধান অভিভাবক শিক্ষকমণ্ডলী। আপনাদের অনুসরণ করেই শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠে। আপনারা যদি তাদের বই পড়াতে পারেন তাহলেই এই প্রোগ্রামটি সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি এই কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।

কর্মশালার প্রধান অতিথি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাং ও সোসাল মিডিয়ার আসক্তি থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে তাদের হাতে বই তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। তিনি তার ছোটবেলার বইপড়ার গল্প তুলে ধরে বলেন, আমরা যখন ছোট তখন চাহিদামত বই পেতাম না। ফলে ইচ্ছে থাকলেও বই পড়ার সুযোগ ছিলো না। আজকের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগটি পাচ্ছেন। ফলে তাদেরকে কর্মসূচির সাথে যুক্ত করতে পারলে আগামীর সোনার বাংলা গঠন সহজ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি জাতি গঠনে বইপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষকমণ্ডীদের আহ্বান জানান। ডিআরএইচ কর্মসূচীর দ্বারা শিক্ষার্থীদের বই পড়ার পাশাপাশি পাঠ দক্ষতার ব্যাপারেও গুরুত্ব বাড়বে। উপস্থিত শিক্ষক ও সংগঠকদের কর্মসূচীর ব্যাপারে উদ্ভূদ্ধ করেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন, কর্মসূচী পরিচালনা করার ব্যাপারে সর্বাত্বক সহযোগীতা করার প্রতি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংগঠকদের আহ্বান করেন এবং অত্র উপজেলায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর মুহাম্মদ (তেজারত)বলেন, শিক্ষকদের সহযোগীতা ছাড়া সরকারের ডিআরএইচ সফল হবে না। শিক্ষার্থীরা পড়ার বাহিরে চলে গিয়েছে তাদেরকে বইমুখী কররতে হবে। তাহলেই ডিআরএইচ কর্মসূচী সফল হবে। সেকায়েপ-এ শ্যামনগর উপজেলা ১০ম স্থানে ছিলো, এবারো প্রথম সারিতেই থাকতে হবে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারনে দীর্ঘদিন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে যে সকল শিক্ষার্থী ছিটকে পড়েছে তাদের দ্রুত ফেরানো সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পড়া গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা সভা, বির্তক প্রতিযোগীতা, দেয়াল পত্রিকা তৈরী ইত্যাদির আয়োজন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা এ মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।