ক্ষতিকর চার জিনিস

ক্ষতিকর চার জিনিস

ক্ষতিকর চার জিনিস

মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত লাভজনক ও ক্ষতিকর উভয় বস্তু বিদ্যমান। মানুষের উচিত লাভজনক জিনিস গ্রহণ করা এবং ক্ষতিকর জিনিস বর্জন করা। মহানবী সা: বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ক্ষতিকর জিনিস চারটি।’ যথা-

চোখ অশ্রুশূন্য হওয়া : চোখ আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি কি তাকে দু’টি চোখ, একটি জিহ্বা ও দু’টি ঠোঁট দিইনি?’ (সূরা আল বালাদ : ৮-৯) সব মানুষকে আল্লাহ তায়ালা চোখ দিয়েছেন; কিন্তু মু’মিনের চোখ সদা আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয় এবং জাহান্নামের চিন্তায় কাঁদে। সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহর ভয়ে সদা ক্রন্দন করতেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আর তারা রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শোনে তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রুসজল দেখতে পাবেন, এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে।’ (সূরা আল মায়েদা-৮৩) যে চোখ প্রভুর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয় না সে চোখ কল্যাণকর ও সৌভাগ্যবান চোখ নয়। তাই মহানবী সা: বলেছেন, ‘অশ্রুশূন্য নয়ন দুর্ভাগ্যজনক নয়ন।’ (বাযযায)

হৃদয় কঠিন হওয়া : মানুষের প্রধান অঙ্গ হলো কলব। মহানবী সা: বলেছেন, ‘মানবদেহে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে যা সুস্থ থাকলে সব দেহ সুস্থ থাকে, আর তা অসুস্থ হলে সব দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার নাম কলব।’ (বুখারি ও মুসলিম)। অপর হাদিসে রয়েছে, মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক আকৃতি ও সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তার কলব ও আমলের দিকে তাকান।’ (মুসলিম) মু’মিনের হৃদয় হয় নরম। আল্লাহর ভয়ে মু’মিনের হৃদয় প্রকম্পিত হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা ঈমানদার তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর কালাম পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের রবের প্রতি ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল-২) কলব শক্ত ও কঠিন হওয়া, আল্লাহর ভয়ে নরম না হওয়া দোষণীয়। কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের হৃদয় এমনটি হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে কঠোর তাদের জন্য দুর্ভোগ।’ (সূরা জুমার) মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহর জিকির ব্যতীত অধিক কথা বলো না। কেননা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অধিক কথা কলবকে শক্ত করে দেয়। আর মানুষের মধ্যে কঠিন হৃদয়ের অধিকারীই আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।

দীর্ঘ আশা করা : মানুষের জীবনে কামনা-বাসনা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু দীর্ঘ কামনা-বাসনা ও আশা-আকাক্সক্ষা করা দোষণীয় এবং অকল্যাণকর। কেননা, দীর্ঘ আশা মানব চরিত্রের ঘৃণিত ব্যাধি এবং বহু ব্যাধির জননী। এতে তার পেরেশানি বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আপনি আপনার চক্ষুদ্বয়কে কখনো লোভী বানাবেন না সেসব জিনিসের প্রতি, যা আমি তাদের তথা অমুসলিমদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, এসব দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সূরা ত্বহা-১৩১) পার্থিব ধন-সম্পদ ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। ফলে তা লাভের জন্য ব্যাকুল হওয়া অনুচিত। মু’মিন দীর্ঘ আশা করবে পরকালের সুখ-শান্তির, যা চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর। অস্থায়ী বস্তু প্রাপ্তির আশা কল্যাণকর নয়; বরং দুর্ভাগ্যের কারণ।

দুনিয়ার লোভ : পার্থিব লোভ মানব চরিত্রের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আদম সন্তান দিনে দিনে বৃদ্ধ হয়। আর তার মনের মধ্যে দু’টি জিনিস বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক. সম্পদের লোভ, দ্বিতীয় হায়াতের লোভ।’ (মিশকাত পৃষ্ঠা-৩০) হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- মহানবী সা: বলেছেন, ‘আদম সন্তান যদি দু’টি পর্বত পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবুও তৃতীয়টি কামনা করে। আদম সন্তানের মোহ-ক্ষুধা মাটি ব্যতীত অন্য কোনো কিছু দিয়ে পূর্ণ হবে না। তবে যে তাওবাহ করে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪৪৯) মহানবী সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়াপ্রীতি সব পাপের মূল।’ (প্রাগুক্ত)

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী