যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা পুতিনের

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘নিউ স্টার্ট' চুক্তিতে রাশিয়া তার অংশগ্রহণ স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই চুক্তির ফলে দুই দেশ কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র সীমিত করার কথা ঘোষণা করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন সফরের এক দিন পরই এ ঘোষণা দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার মস্কোতে পুতিন এক ভাষণে বলেন, ‘আমি ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি, কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে আসছে।’ আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’-ই ছিল শেষ চুক্তি।

পুতিন জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে না। তবে স্থগিত করার ফলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের অবশিষ্ট অংশও ঝুঁকিতে পড়ে গেল। উল্লেখ্য, বিশ্বের সকল পরমাণু অস্ত্রের প্রায় ৯০ ভাগ রয়েছে এই দেশ দুটির মধ্যে। আর এসব অস্ত্র পুরো বিশ্বকে কয়েকবার ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।

কৌশলগতভাবে পরমাণু অস্ত্র কমানোর ক্ষেত্রে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার এই নেতিবাচক অবস্থান পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা উস্কে দিলো বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ২০১০ সালে বারাক ওবামার আমলে মস্কোর সঙ্গে ‘নিউ স্টার্ট’ নামে ওই চুক্তি সই হয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়ে দেন, এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এবার একতরফাভাবে সেই চুক্তি স্থগিত করার কথা ঘোষণা করলেন পুতিন।

ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দুনিয়ার অবস্থানই এই সিদ্ধান্তের ‘কারণ’ বলে জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যুদ্ধ চায় না। পাশ্চাত্য শক্তি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। তারা ক্রিমিয়ার ওপরে হামলা চালানোর ছক কষছে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পরে একইভাবে জাতিসঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত ‘পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি’ সই করতে অসম্মত হয়েছিল রাশিয়া। জাতিসঙ্ঘে রুশ প্রতিনিধি ইগর ভিশনেভেতস্কি বলেন, ‘ওই চুক্তির বয়ানে সমতা নেই। আমাদের মূল আপত্তি চুক্তিপত্রের কিছু অংশ নিয়ে। যা ভীষণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ।’

নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি (আইএনএফ)’ চুক্তির কারণে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩১০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ মাইল) পাল্লার মধ্যে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া। ওই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হানা বন্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল দু’টি দেশ। চুক্তির পর ১৯৯১ সালে ২ হাজার ৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এবার পুতিন থামিয়ে দিলেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সেই প্রক্রিয়া।

সূত্র : রয়টার্স, আল আরাবিয়া ও অন্যান্য