রাশিয়ার কারণে বেলারুশের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা

রাশিয়ার কারণে বেলারুশের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা

রাশিয়ার কারণে বেলারুশের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা

রাষ্ট্র হিসেবে বেলারুশের অস্তিত্বেরও কি অবসান চায় মস্কো? ক্রেমলিনের গোপন নথি অনুযায়ী বিনা সঙ্ঘাতে ২০৩০ সালের মধ্যে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী রাশিয়া।

ইউক্রেনের ওপর হামলার নানা কারণ দেখিয়ে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মধ্যে একটি হলো আবার নতুন করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে ফেলে মস্কোর ক্ষমতার বলয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন তিনি। তবে শুধু ইউক্রেন নয়। অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রেরও যে একই দশা হতে পারে, রাশিয়ার প্রশাসন এমন ইঙ্গিতই দিয়ে চলেছে। যেমন ক্রেমলিনের একটি গোপন নথি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বেলারুশকে কার্যত রাশিয়ার অন্তর্গত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জার্মানির একাধিক সংবাদমাধ্যম মঙ্গলবার ওই গোপন নথি উদ্ধৃত করে রাশিয়ার এই পরিকল্পনা দাবি করেছে। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে রচিত ১৭ পৃষ্ঠার ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের চররা ধাপে ধাপে বেলারুশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কাঠামোয় প্রবেশ করে শেষে নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেবে। তবে সরাসরি বেলারুশকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের অন্তর্গত না করে অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়নের ধাঁচে এক কাঠামোতে গড়ে তুলতে চায় মস্কো, যেটির নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই রাশিয়ার হাতে থাকবে। রিপোর্টে ২০২২, ২০২৫ ও ২০৩০ পর্যন্ত নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বেলারুশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপও ক্রেমলিনের এমন পরিকল্পনার সাথে খাপ খেয়ে যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়লেও ওই দেশের ভূখণ্ড ও সম্পদ কাজে লাগিয়ে রুশ বাহিনী গত প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বেলারুশ সংবিধান সংস্কার করে রাশিয়ার আইনের সাথে সমন্বয় আরো জোরালো করেছে। পশ্চিমা বিশ্ব তথা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রভাব রুখতেও বেলারুশকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে মস্কো।

সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশিত রুশ গোপন নথি খাঁটি বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। স্টকহোম সেন্টার ফর ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান স্টাডিজের উপ-প্রধান মার্টিন ক্রাগ সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, ওই নথির কাঠামো রাশিয়ার আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রশাসনের সাথে খাপ খেয়ে যায়। তাছাড়া ১৯৯০-এর দশক থেকে মস্কোর ঘোষিত নীতির সাথেও এমন নথি খাপ খেয়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেংকো রাশিয়ার সাথে নিবিড় সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ওই দেশে প্রায় ১০ হাজার রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। দুই দেশ যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়ে আসছে।

লুকাশেংকো সোমবার দেশের প্রত্যেক শহর ও গ্রামে প্যারামিলিটারি ইউনিট গড়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। একইসাথে ‘পরিবার ও বাসা' রক্ষা করতে প্রয়োজনে দেশের সব পুরুষের অস্ত্র চালানোর শিক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। বেলারুশ এক বিশাল রিজার্ভ বাহিনী গড়ে তোলারও উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে একমাত্র হামলার মুখেই বেলারুশের সৈন্য ইউক্রেনে প্রবেশ করবে বলে লুকাশেংকো একাধিকবার দাবি করেছেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে