বাংলাদেশের সাথে কৃষি সহযোগিতা চায় কানাডা

বাংলাদেশের সাথে কৃষি সহযোগিতা চায় কানাডা

সংগৃহীত

কানাডা বাংলাদেশের সাথে কৃষিখাতে, বিশেষ করে খাদ্য সঞ্চয় এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী হারজিত এস সজ্জন এ আগ্রহের কথা জানান।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো: নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মুখপাত্র জানান, সফররত কানাডার মন্ত্রী কৃষি ও শিক্ষায় বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এ সময় গণভবনের ভেতরে একটি বড় কৃষি খামার গড়ে তোলার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেন কানাডার মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী কানাডার উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। কানাডার বিনিয়োগকারীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

তিনি বলেন, তার সরকার স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার রফতানি করার জন্য কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়নের ওপর জোর দেয়।

বাংলাদেশ বৃহৎ জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্থানীয় জনগণকে খাওয়ানো এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য রফতানি বা খাদ্যের জন্য অন্যান্য দেশকে সহায়তা করার জন্য এই ছোট অঞ্চলেই উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফল হয়েছে, কারণ এদেশের বিজ্ঞানীরা অনেক উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এক সময় দেশের; বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক জমি পতিত ছিল। লবণাক্ত ও খরা সহনশীল জাতগুলোর বিকাশের ফলে এগুলো চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে হাসিনা বলেন, সরকার তাদের সেচ, কৃষি যন্ত্রপাতি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি প্রদান করে এবং অন্যান্য অনেক কর্মসূচির আওতায় তাদের সহায়তা করে।

তিনি বলেন, সরকার একটি মাইক্রো-সেভিং প্রোগ্রাম চালু করেছে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকরা তাদের অর্থ সঞ্চয় করতে পারে এবং এটি থেকে ঋণও নিতে পারে।

তিনি আরো বলেন, সেচের ক্ষেত্রে, সরকার এখন প্রকৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং ভূ-পৃষ্ঠের পানির ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসনে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

তবে তিনি নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরে আরও বেশি এলাকা উন্নয়নে এবং কক্সবাজার থেকে আরো রোহিঙ্গাদের তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য স্থানান্তর করতে কানাডার সহায়তা চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করতে নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচর দ্বীপের উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেখানে উন্নত জীবনযাত্রার জন্য স্থান সম্প্রসারণ করা গেলে কক্সবাজার থেকে আরো বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা যেতে পারে, এ বিষয়ে দাতাদের সহায়তা কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে কিছু রোহিঙ্গা মানব ও মাদক পাচার এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ক্যাম্পে নারীরা; বিশেষ করে শিশু ও কিশোরী মেয়েরা একটি অমানবিক পরিবেশে জীবনযাপন করছে। ভাসানচরে গেলে তারা সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে।

শিক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে এবং বিদেশের বাজারে দক্ষ শ্রম রফতানি করে রেমিট্যান্সের বহিঃপ্রবাহ বাড়াতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তির বিকাশে গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস